ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, যেন এক হৃদয়ের দুই রাষ্ট্র!

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৭:৪২, ৮ এপ্রিল ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, যেন এক হৃদয়ের দুই রাষ্ট্র!

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর ইতিহাসে কিছু অধ্যায় থাকে, যেগুলো রক্ত আর কান্নায় লেখা হয়। গাজা আজ সেসব অধ্যায়ের এক ভয়ঙ্কর নাম। ইসরায়েলের আগ্রসনে রক্তে ভিজছে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি, রাস্তায় পড়ে আছে শিশুদের নিথর দেহ। মায়ের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে বাতাস। বাঁচার জন্য নয়, মরার জন্যই যেন গাজায় জন্ম নিচ্ছে নতুন জীবন।

বিশ্ব যখন চুপ, গুটিকয়েক দেশ দেশ তখন এই নৃশংসতাকে সমর্থন করছে, তার মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকা ইসরায়েলের জন্য সবকিছু করতে পারে, কিন্তু এর পেছনে রহস্য কী? কেন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এতো নিঃস্বার্থভাবে সমর্থন দেয়?

অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র নিঃস্বার্থভাবে ইসরায়েলকে ভালোবাসে, কিন্তু বাস্তবে এই সম্পর্কের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও আদর্শিক স্বার্থ। যে স্বার্থগুলোর জন্য গাজায় এই অমানবিক হত্যাযজ্ঞ চালানোর ব্যাপারেও ইসরায়েলকে সমর্থন করতে একদণ্ডও ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র।

আমেরিকার বেশিরভাগ জনগণ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। বিশেষত ইভানজেলিকাল খ্রিস্টানরা ইসরায়েলকে বাইবেলের পবিত্র ভূমি হিসেবে বিবেচনা করে। তারা বিশ্বাস করে যে, ইসরায়েলের অস্তিত্ব এবং সমৃদ্ধি ঈশ্বরের পরিকল্পনার অংশ। মার্কিন রাজনীতিতেও ইভানজেলিকাল খ্রিস্টানদের বড় অংশের প্রভাব রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির হাতে ৬ মিলিয়ন ইহুদি নিহত হয়, যা বিশ্বব্যাপী ইহুদি সম্প্রদায়কে গভীরভাবে আঘাত করে। আমেরিকা তখন থেকেই ইহুদিদের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্র গঠনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করে। ১৯৪৮ সালে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হয়, তখন আমেরিকা প্রথম দেশগুলোর মধ্যে ছিল যারা একে স্বীকৃতি দেয়। আবার মার্কিন রাজনীতিবিদদের একটি বড় অংশ ইহুদিদের দ্বারা প্রভাবিত।

২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করে, যা খ্রিস্টান ধর্মীয় অনুভূতির কারণেই সম্ভব হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে আইপ্যাক (আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি, AIPAC) নামে শক্তিশালী একটি লবি গ্রুপ রয়েছে। মার্কিন রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি দান করা গ্রুপগুলোর মধ্যে এই আইপ্যাক অন্যতম। কংগ্রেস সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারে ইসরায়েলপন্থী লবি বিশাল অনুদান দেয়। মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের ৯০ শতাংশের বেশি ইসরায়েলপন্থী অবস্থান নেয়, কারণ ইসরায়েলি লবি তাদের সমর্থন করে। যারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।

শুধু তাই নয় মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, সিরিয়া, লেবাননের মত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে বন্ধুর চোখে দেখে না। ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আমেরিকা তাই মধ্যপ্রাচ্যে নিজের আধিপত্য বজায় রাখে। ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও সামরিক কার্যক্রমেরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, ইসরায়েলের মত একটি দেশ থাকলে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক উপস্থিতি শক্তিশালী হবে।

এসব কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সমর্থন করে ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেখছে গাজাবাসীর আর্তনাদ। একটি করে শিশুর দেহ খণ্ড বিখণ্ড হয়ে পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে, কোনো শিশুর মাথা নেই, আবার কোন পিতার কোলে নেই তার সন্তান। মায়েরা নিঃশব্দে চিৎকার করছে, আর বাবারা তাকিয়ে আছে শূন্য চোখে।

কাঁদতে কাঁদতে গাজাবাসীদের এমন অবস্থা, তাদের গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে গেছে। গাজা যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়ে আজ রক্তক্ষরণ। তবে এই কঠিন সময়ে মানবতার দীপ্তি এখনও ম্লান হয়নি। গাজার হারানো স্বপ্নগুলো পুনরুদ্ধারে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলো।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=_mfpLImNN_o

রাকিব

×