ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২

হিটলার কেন ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন? 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৩:৫৭, ৮ এপ্রিল ২০২৫

হিটলার কেন ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন? 

মৃত্যুদন্ড এবং ভয়াবহ মানব পরীক্ষার জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। যেখানে মানব ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছিল। ইহুদিদের মারার নানান নিষ্ঠুর কৌশল নিয়ে পরীক্ষা চলতো কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। হত্যার আগে পুরুষ বন্দীদের নানা রকম ট্যাটু করে দেওয়া হতো। মৃত্যুর পর তাদের চামড়া দিয়ে আকর্ষণীয় ল্যাম্পশেড, অ্যালবাম ও টেবিল কভার তৈরি করা হত। মানুষের বুড়ো আঙুলকে ব্যবহার করা হতো আলোর সুইচ হিসেবে। এরকম বিচিত্রতম অত্যাচার চালাতো নাৎসিরা। যার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। গ্যাস চেম্বারে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা, আগুনে নিক্ষেপের মত ঘৃণ্য কাজে মত্ত ছিল তারা। মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছিল হিটলার। আনুমানিক ৬০ লাখ ইহুদিকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। 

কী এমন কারণ ছিল এই হত্যাযজ্ঞের পেছনে? 

ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করতেন হিটলার। ছেলেবেলায় ভিয়েনাতে বসবাস করতেন তিনি। ভিয়েনার একটি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন হিটলার। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য তাকে বারবার আর্ট কলেজ থেকে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছিল। অনেকেই ধারণা করেন তখন থেকেই ইহুদিদের প্রতি এক ধরণের বিতৃষ্ণার জন্ম হয়েছিল হিটলারের ভেতরে। 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিদের পরজিত হওয়ার কারণ হিসেবে একমাত্র ইহুদিদের দায়ী করতেন হিটলার। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ১৯১৮ সালে জার্মানির রাজতন্ত্রের বিলোপ ইহুদিদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছিল৷ মিউনখ থেকে ইহুদিরা বিপ্লব করে রাজতন্ত্র ধ্বংস করেছিল। এমনটাই ছিল তার ধারণা। আর হিটলার লক্ষ করেছিলেন জার্মানিতে বসেই ইহুদিরা জার্মানির ব্যবসা বাণিজ্যসহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে। যা তিনি সহজে মেনে নিতে পারেননি। 

আবার ইতিহাসবিদদের মতে, ইহুদি নিধন বা হলকস্টের মূল কারণ ছিল আদর্শগত এবং এর শেকড় ছিল হিটলারের কাল্পনিক জগৎ। হিটলারের ধারণা ছিল পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করতে একটি আন্তর্জাতিক ইহুদি চক্রান্ত চলছে। এই ইহুদিদের নির্মূল করতে পারলেই তিনি বিশ্ব জয় করতে পারবেন। এমন বিশ্বাস তার মধ্যে কাজ করছিল। হিটলার একটি শ্রেণীকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিল যে ইহুদিদের কথিত ষড়যন্ত্র ঠেকাতে না পারলে জার্মানি এমনকি পৃথিবী হুমকির মুখে পড়বে।

এছাড়াও নাৎসি বাহিনীর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তাদেরকে ইহুদি নিধনের পথে চালনা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে তারা এতোটা বেপরোয়া ছিল না বলে জানা যায়। কিন্তু ১৯৪১ সালে রাশিয়া আক্রমণের সময় নাৎসি বাহিনীর সাফল্য হিটলারের মনে প্রবল আত্মবিশ্বাস এনে দেয়৷ তিনি ভেবেছিলেন রাশিয়া তার পদানত হবে। ফলে তার ইহুদি হত্যায় বাঁধা দেওয়ার আর কেউ থাকবে না। এই হত্যাযজ্ঞ চলে হিটলারের পরাজয়ের আগ পর্যন্ত। অর্থাৎ ১৯৪৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। 

মুমু

×