ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল আবারো একসাথে, কি সিদ্ধান্ত আসবে?

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ৮ এপ্রিল ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল আবারো একসাথে, কি সিদ্ধান্ত আসবে?

ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে ফের মুখোমুখি দুই পুরনো খেলোয়াড়—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ৭ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে বসার কথা। এই দুই বিশ্বনেতার এই বৈঠকটা শুধু দুই নেতার পারস্পরিক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং এর চেয়েও হতে পারে অনেক বেশি কিছু। কারণ, নেতানিয়াহু হচ্ছেন প্রথম বিদেশি নেতা যিনি ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণার পর ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন।

এবার এই বৈঠকের টেবিলে রয়েছে গাজার যুদ্ধ, ইরানের হুমকি। আরো আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নতুন শুল্কনীতি, যা কাঁপিয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণার পর যখন অনেক দেশের উপরেই চাপানো হয়েছে শুল্কের পাহাড়, তখনই ঘোষণা আসে—ইসরায়েলকেও ছাড় দেওয়া হবে না। আমদানি পণ্যের উপর ১৭ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

মূলত এই অবস্থার ঠেকাতেই জরুরি ভিত্তিতে ওয়াশিংটনে উড়ে গেছেন নেতানিয়াহু। নিজ দেশের রপ্তানি রক্ষায় ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে মরিয়া তিনি। শুধু তাই নয়, ট্রাম্পের টেবিলে ইরান নিয়ে রয়েছে নতুন করে আলোচনার ইঙ্গিত। আন্তর্জাতিক মহলে গুঞ্জন, দুই নেতার মধ্যে কি তাহলে নতুন কোন চুক্তির ছক কষা হচ্ছে?

হাঙ্গেরি সফর শেষে সরাসরি ওয়াশিংটনে পৌঁছান নেতানিয়াহু। সাংবাদিকদের তিনি জানান, "এটা শুধু একটি শুল্ক সংক্রান্ত বৈঠক নয়, বরং এটি ইসরায়েলের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।" তিনি জানান, এই আলোচনা ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রতিফলন এবং যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের অটুট বন্ধনের প্রকাশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহু চেষ্টা করবেন যেন অন্তত ইসরায়েলের জন্য শুল্কের ব্যাপারে ছাড় পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তেলআবিবে অবস্থিত বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের প্রধান জনাথন রাইনহোল্ড বলেন, "এই সফরের তাৎক্ষণিকতা বোঝায়—ইসরায়েল চাইছে শুল্ক বিষয়ে এই সিদ্ধান্তটি প্রাতিষ্ঠানিক হবার আগে যেকোন মূল্যে ঠেকাতে।"

যদিও ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় রকমের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাই এ বিষয়ে শুল্ক আরোপ জরুরি।

তবে ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর এই বৈঠকে শুধু শুল্ক নয়, আলোচনায় আছে গাজা যুদ্ধ এবং ইরান ইস্যুও। নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, তিনি গাজায় চলমান যুদ্ধ, বন্দী ইসরায়েলিদের মুক্তি এবং ইরানের বাড়তে থাকা হুমকি নিয়েও ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

গোটা বিশ্ব দেখেছে, গেল ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল আবারো দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় এই বিরতিটি হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা পুনঃস্থাপনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। হামাস-শাসিত গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নতুন দফায় হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১,৩৩০ জন। এখনো গাজায় ৫৮ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৪ জনকে মৃত বলে জানায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

এদিকে, ইরানের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছেন—তিনি ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় যেতে চান, নতুন করে একটি পারমাণবিক চুক্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইরান জানিয়ে দিয়েছে—চাপের মুখে কোনো আলোচনাই অর্থহীন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস রাখছি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন—কোনো রকম হুমকি বা সামরিক তৎপরতার প্রতিক্রিয়া খুবই ভয়াবহ হবে।

বিশ্বজুড়ে জল্পনা—যদি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হয়, তাহলে কি ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উপর হামলা চালাতে পারে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর এই বৈঠক তাই শুধু দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার অংশ নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই এর প্রভাব পড়তে পারে। শেষ প্রশ্নটা এখন পুরো বিশ্বের—এই বৈঠক শুধু কথায় শেষ হবে, নাকি বদলে দেবে সামগ্রিক ভূরাজনীতি?

সূত্রঃ https://youtu.be/trBdPcpSSjg?si=Og4bHcfGXOjKurdw

ইমরান

×