ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির হিড়িক

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:২১, ৮ এপ্রিল ২০২৫

বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির হিড়িক

ছবি: সংগৃহীত

বিনিয়োগকারীদের আস্থার ভিত সমূলে নাড়া দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর বৈশ্বিক শুল্কারোপ। এতে পুঁজিবাজারগুলোয় শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়েছে, আজ সোমবারের লেনদেনে যা আরও তীব্র হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল ট্রাম্প নতুন এই পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্ত থেকে শেষপর্যন্ত সরে আসবেন, কিন্তু সে আশায় আর বুক বাধতে পারছেন না তাঁরা। যার ফলে হাতে রাখা শেয়ার ছেড়ে দেওয়ায়— বাজারমূল্যেও নেমেছে ধস।

সোমবারেও বিশ্বের প্রধান প্রধান পুঁজিবাজারে হোঁচট খেয়েছে শেয়ারদর। এপর্যন্ত টানা তিনদিনে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার হারিয়েছে সাড়ে ৯ লাখ কোটি ডলারের শেয়ারমূল্য। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর সমন্বিত সূচক এসঅ্যান্ডপি ফিউচার্স ৩ শতাংশ লোকসানের ইঙ্গিত দিয়েছে। এসঅ্যান্ডপি সূচকের ভিত্তিতে বাজার অস্থিতিশীলতার পূর্বাভাস দেওয়া ভিক্স সূচক ৫০ পয়েন্টের উপরে অবস্থান করছে, যা সামনে বড় অস্থিরতাকে নির্দেশ করে।

এই ধস থেকে রক্ষা পায়নি ইউরোপের বাজারও। ইউরোপীয় পুঁজিবাজারের সার্বিক সূচক স্টক্স ৬০০ এর পতন হয়েছে ৫ শতাংশ। আর ২০০৮ সালের পরে আজ সোমবারেই সবচেয়ে বড় পতন দেখেছে এশিয়ার পুঁজিবাজার। তবে পুঁজিবাজারের বদলে ট্রেজারি ও জাপানের মুদ্রা ইয়েনে বেশি বিনিয়োগ করেছেন এশিয়ায় বিনিয়োগকারীরা, যেকারণে এ দুইয়ের মূল্যে উত্থান হয়েছে।

গত বুধবার ট্রাম্প তার নতুন পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দেন। এতে মন্দা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কেও তাঁকে হুঁশিয়ারি দেন অর্থনীতিবিদরা। ট্ট্রাম্প সমর্থক বিল অ্যাকম্যানের মতো হেজ ফান্ড ব্যবস্থাপকরাও করেন এর সমালোচনা। তবু সপ্তাহান্তে ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তে অটল থাকারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফলে মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর এ কৌশল থেকে পিছু হটবেন না। রবিবার এয়ারফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ সময় ইঙ্গিত দেন, বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে যে কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে, তাতে তাঁর কিছু আসে যায় না।

ট্রাম্প বলেন, 'আমি চাই না কোনো কিছুতে ধস নামুক। তবে মাঝেমধ্যে কিছু জিনিস ঠিক করার জন্য আপনাকে ওষুধ নিতে হয়...আপাতত আপনারা পুঁজিবাজারকে ভুলে যান।' একথার মাধ্যমে ওয়ালস্ট্রিটের বাজারে পড়া তীব্র নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে তাঁর উদাসীনতাই ফুটে ওঠে। ফলে আরও আশাহত হন বিনিয়োগকারীরাও। বৈশ্বিক একটি বৃহৎ সম্পদ ব্যবস্থাপক সংস্থা— বিএনপি পারিবাস ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট এর মুখ্য বিনিয়োগ কৌশলবিদ স্তেফান কেম্পার বলেন, "মনে হচ্ছে বাজার এখন বিক্রির দিকে ঝুঁকছে। 'আগে বিক্রি করো, পরে প্রশ্ন কর'- আপাতত এমন মনোভাবই বিরাজ করছে।"

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, বিনিয়োগকারীরা হাতের শেয়ার ছেড়ে দিয়ে সূচকের যে পতন ঘটাচ্ছেন, তাতে করে একটা চাপও তারা তৈরি করছেন। সর্বোচ্চ কোন চাপের মুখে ট্রাম্প প্রশাসন নতিস্বীকার করে— সেটাই তারা দেখতে চান।

রবিবার ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ইচ্ছেকৃতভাবে পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির হিড়িক উস্কে দেননি। একইসময় শুল্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতিগুলো পুরোপুরি দূর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। ট্রাম্প যাই বলুন না কেন, বিশ্ব পুঁজিবাজার শেয়ার বিক্রির চাপে নুয়ে পড়েছে। এমনকী অ্যাপল ইনকর্পোরেশন, অ্যামাজন ডটকম ইনকর্পোরেশন ও সিটি গ্রুপ ইনকর্পোরেশনের মতো জায়ান্টদের শেয়ারদর পতন হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরের পরে ইউরোপের স্টক্স ৬০০ সূচক সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে, জার্মানির ডিএএক্স সূচক কিছুসময়ের জন্য ১০ শতাংশের মতো বড় পতন লক্ষ্য করলেও পরে তার কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে। চলতি বছরে সেরা পারফর্ম করা শেয়ারগুলোও বিক্রির চাপে পড়েছে, কারণ লাভে এগুলো বিক্রি করে পুঁজি নগদে উঠিয়ে নেন বিনিয়োগকারীরা। হংকংয়ের হাংসেং সূচকের ১৩ শতাংশ পতন হয়েছে। অন্যদিকে কিছু সময়ের জন্য শেয়ার বিক্রয়াদেশ বন্ধ রাখতে হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পুঁজিবাজারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে চীনের ওপর। গত সপ্তাহজুড়েই দেশটির নীতিনির্ধারকরা এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এরমধ্যে স্থানীয় ভোগব্যয় বাড়াতে বিপুল প্রণোদনা দেওয়ার মতো বিষয়ও ছিল বলে জানিয়েছেন এব্যাপারে অবহিতরা।

এদিকে মন্দা দেখা দিলে পুঁজিবাজারের পতন আরও গভীর হওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বাজার কৌশলবিদরা। এরমধ্যেই মার্কিন বাজারের প্রভাবশালী পূর্বাভাসদাতা ওপেনহাইমার অ্যান্ড কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এর জন্য তাদের এবছরের লক্ষ্যমাত্রা বড় আকারে হ্রাস করে ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে নামিয়েছে। আগে সংস্থাটি ৭ হাজার ১০০ পয়েন্ট পূর্বাভাস দিয়েছিল সূচকটির।  

শহীদ

×