ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

সৌদির সমর্থন পেলেই ইরানে হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র!

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ৭ এপ্রিল ২০২৫

সৌদির সমর্থন পেলেই ইরানে হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র!

প্রতীকী ছবি

'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' স্লোগানে দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবৈধ অভিবাসীদের হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে বের করে দেয়া, শতাধিক দেশের পণ্যে শুল্কারোপ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে একনায়ক ও অগুরুত্বপূর্ণ আখ্যা, ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলার নির্দেশ, ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে গাজা দখলের পর আবাসন প্রকল্প এবং গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি- এসব সিদ্ধান্তের কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম আলোচিত-সমালোচিত ও বহুল চর্চিত ব্যক্তি।

তবে এসব কিছু পেছনে ফেলে বর্তমানে টক অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইরানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বোমা ফেলার হুমকি। পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে গেল মার্চের শেষের দিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি দেন ট্রাম্প। চিঠিতে বলা হয়, আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি না করলে ইরানে বোমা হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত পরমাণু ইস্যুতেই দুই দেশের সম্পর্ক এখন সাপে-নেউলে।

অথচ যুক্তরাষ্ট্র আর ইরানের মধ্যে একসময় ছিল গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। বর্তমানে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রে যেমন সম্পর্ক বিদ্যমান, ৪৬ বছর আগেও তার চেয়ে বেশি ভালো সম্পর্ক ছিল তেহরান-ওয়াশিংটনের। খামেনির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনে ইরানের শেষ সম্রাট মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী দেশ ছাড়ার পরই দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

মূলত ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে সমর্থন দেওয়ার কারণেই ওয়াশিংটন আর তেহরানের যুদ্ধাংদেহী মনোভাব। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া তুরস্কের পর ইরানই ছিল দ্বিতীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।

ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও অনেক আলাপ-আলোচনার পর ২০১৫ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ পারমাণবিক দেশ ও জার্মানির সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে ২০১৮ সালে ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদকালে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এতে ওয়াশিংটন-তেহরান সম্পর্কে ফের জটিলতা তৈরি হয়।

অথচ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর পরমাণু ইস্যুতে আরো আগ্রাসী মনোভাব দেখান ট্রাম্প। বলেন, পরমাণু ইস্যুতে নতুন চুক্তির জন্য ইরানকে সরাসরি আলোচনায় বসতে হবে। অন্যথায় ইরানে বোমা ফেলবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলার হুমকিকে সমর্থন করছে না সৌদি আরবসহ সাত উপসাগরীয় দেশ।

এসব দেশ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ইরানে হামলা চালানোর সময় মার্কিন বাহিনীকে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না, ব্যবহার করতে দেবে না তাদের দেশে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোও। তারপরও ইরানের হামলার ব্যাপারে ভেতরে ভেতরে সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। শুধু বাকি রয়েছে হামলায় সৌদিসহ উপসাগরীয় সাত দেশের সমর্থন ও সহযোগিতা আদায়।

এজন্যই উপসাগরীয় দেশগুলোকে ম্যানেজ করতে রিয়াদে একের পর এক বৈঠক করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড প্রধান জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিলা। বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা।

তবে ট্রাম্পের হামলার হুমকিকে একদমই পাত্তা দিচ্ছে না ইরান। বরং পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইরানে হামলা হলে কঠিন জবাব দেয়া হবে, মার্কিন হুমকির কাছে ইরান মাথা নত করবে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি রোববার স্পষ্টভাবে বলেছেন, একটি পক্ষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা অর্থহীন। যখন সেই পক্ষ জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘন করে বারবার বল প্রয়োগের হুমকি দেয়, যে পক্ষের বিভিন্ন কর্মকর্তার বক্তব্যে বিপরীতমুখী অবস্থান প্রকাশ পায়। ওয়াশিংটনের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, 'আপনি যদি আলোচনায় বসতে চান তাহলে হুমকি দেয়ার মানে কী?' এর আগে শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, তাঁর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমমর্যাদার সংলাপে বসতে আগ্রহী।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=KUOuSh4wJjE

রাকিব

×