
ছবি : সংগৃহীত
কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া যেন নিঃশব্দে এক প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনের হামলায় রুশ নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপ ক্রুজার 'মস্কভা' ডুবে যাওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন রাশিয়ার নৌশক্তি পুনরুদ্ধার করতে সময় লাগবে। কিন্তু সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট ছবি থেকে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন নতুন করে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। রাশিয়া এখন একটি বিশাল অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ নির্মাণ করছে, যা 'ইভান রোগভ' ক্লাসের যুদ্ধজাহাজ হিসেবে পরিচিত।
ডুবে যাওয়া 'মস্কভা' ছিল ১৮৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১১,০০০ টন ওজনের একটি ক্রুজার। অন্যদিকেএই নতুন জাহাজটি হবে ২২০ মিটার লম্বা এবং প্রায় ৩০,০০০ টন ওজনের (প্রাথমিক রিপোর্টে ৩০০ টন বলা হলেও এটি সম্ভবত একটি টাইপো, প্রকৃত ওজন অনেক বেশি)। এটিকে 'জলপথে চলমান একটি ছোট সেনাঘাঁটি' বলা চলে, কারণ এটি একসাথে ১৫টি হেলিকপ্টার, ৯০টি সামরিক যান এবং ৯০০ সেনা বহন করতে সক্ষম।
ইউক্রেনের ডিফেন্স এক্সপ্রেসের তথ্যমতে, রাশিয়া দখলকৃত ক্রিমিয়ার জালিভ শিপইয়ার্ডে এই জাহাজটি নির্মাণ করছে। যদিও এর কাজ ২০২০ সালেই শুরু হয়েছিল, তবে প্রথমদিকে অগ্রগতি ছিল ধীর। গত কয়েক মাসে নির্মাণকাজের গতি বেড়েছে, এবং ২০২৪ সালের জুলাই নাগাদ জাহাজটির কাঠামো প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে এটি এখনও পরীক্ষামূলক সমুদ্রযাত্রার জন্য প্রস্তুত নয়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের আগে এই জাহাজটি সাগরে নামবে না, এবং সময়মতো কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
২০২২ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় 'মস্কভা' ডুবে যায়, যা রুশ নৌবাহিনীর জন্য একটি বড় আঘাত ছিল। রাশিয়া প্রথমে এই হামলা অস্বীকার করে জাহাজে দুর্ঘটনাজনিত আগুনের কথা বললেও পরবর্তীতে ইউক্রেনের দাবিই সত্য বলে প্রমাণিত হয়। এই ঘটনার পর রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে তার নৌশক্তি পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করে। নতুন এই যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ সেই প্রচেষ্টারই অংশ।
ইউক্রেনের সাংবাদিক টিম হোয়াইট সহ কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, জাহাজটি এখনও নির্মাণাধীন থাকায় ইউক্রেন যদি জালিভ শিপইয়ার্ডে হামলা চালায়, তবে পুরো প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই ইউক্রেন ক্রিমিয়ায় রুশ লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তাই এই আশঙ্কা অমূলক নয়।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাশিয়া কেবল প্রতিশোধ নয়, বরং কৃষ্ণসাগরে তার আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চায়। 'ইভান রোগভ' ক্লাসের এই জাহাজটি যদি সফলভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে এটি রুশ নৌবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্র হয়ে উঠবে। তবে যুদ্ধের বর্তমান গতিধারা এবং ইউক্রেনের প্রতিরোধ ক্ষমতা বিবেচনায় এই পরিকল্পনা কতটা সফল হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
সূত্র:https://youtu.be/21465L5RD3k?si=onleg8hkvMwN9DuU
আঁখি