
ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মার্কিন দোকানগুলোতে অস্বাভাবিক ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেখানে মানুষ দ্রুত গতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক সামগ্রী পর্যন্ত মজুদ করছে। এই আতঙ্কিত কেনাকাটার পিছনে মূল কারণ হলো ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত নতুন শুল্ক নীতি, যা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দাম আকস্মিকভাবে বাড়িয়ে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যে ৫২ শতাংশ এবং তাইওয়ান থেকে আমদানিকৃত পণ্যে ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেটের মতো ইলেকট্রনিক পণ্য থেকে শুরু করে গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, পোশাক এবং এমনকি কফির মতো দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যও। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে শীঘ্রই বাজারে এসব পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে। এই আশঙ্কাই মার্কিন নাগরিকদের জরুরি ভিত্তিতে পণ্য মজুদ করতে উদ্বুদ্ধ করছে।
মার্কিন খুচরা বাজারগুলোতে এখন অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ইলেকট্রনিক্স দোকানগুলোতে ভিড় জমেছে ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন কিনতে, অটো শোরুমে দেখা যাচ্ছে গাড়ি ক্রেতাদের ভিড়, এমনকি মুদি দোকানগুলোতেও কফি ও মসলার মতো পণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যেই গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করছিলেন, তারা ট্রাম্পের গাড়িতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরপরই দ্রুত কেনাকাটা সেরে ফেলছেন। বাজার বিশ্লেষকরা এই প্রবণতাকে 'প্যানিক বাইং' বা 'আতঙ্কিত কেনাকাটা' বলে বর্ণনা করছেন।
ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির প্রভাব শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নেই। ঘোষণার পরপরই বৈশ্বিক শেয়ার বাজারে বড় ধস নেমেছে। বিশেষ করে চীন এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে শুল্ক বাড়িয়েছে ৩৪ শতাংশে। এই পরিস্থিতিকে অনেকেই মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছেন। ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চীনের এই সিদ্ধান্তকে দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করলেও, অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে এই বাণিজ্য সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি স্বল্পমেয়াদে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব হতে পারে আরও ব্যাপক। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, এই নীতি সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটিয়ে মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তাদেরই বেশি ক্ষতি করবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে যদি সাধারণ নাগরিকরা এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
আঁখি