
.
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফা মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র তিন মাস আগে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র, ধনকুবের ইলন মাস্কের কিছু খামখেয়ালিপনা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে লাখ লাখ মানুষ। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্যের ১২শ’র বেশি স্থান ও বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। এই বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয় ‘হ্যান্ডস অফ’। প্রতিবাদকারীদের মধ্যে বিজ্ঞানী, শিল্পী, শিক্ষক এমনকি সাধারণ গৃহিণীও ছিলেন।
শনিবার সকাল থেকেই নিউইয়র্ক, বোস্টন, কলোরাডো, হিউস্টন, লস অ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটনের রাস্তায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দেয় লোকজন। এছাড়া কানাডা, মেক্সিকো, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডনসহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়। মেঘলা আকাশ ও হালকা বৃষ্টির মধ্যে ওয়াশিংটন মন্যুমেন্টের চারপাশের মাঠে জমায়েত হন বিক্ষোভকারীরা। আয়োজকদের দাবি, ন্যাশনাল মলে প্রায় ২০ হাজার মানুষ সমাবেশে অংশ নেন। ১৫০টির বেশি সংগঠন এই প্রতিবাদে শামিল হয়। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও সিএনএন অনলাইনের।
নিউ জার্সির প্রিন্সটন থেকে আসা অবসরপ্রাপ্ত বায়োমেডিক্যাল বিজ্ঞানী টেরি ক্লাইন বলেন, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, ডোজের পদক্ষেপ, শুল্ক নীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা সবকিছু নিয়েই আমরা ক্ষুব্ধ। আমাদের পুরো দেশই আক্রমণের মুখে। ন্যাশনাল মলে ক্রমেই বাড়ছিল জনসমাগম। কেউ ইউক্রেনের পতাকা নিয়ে এসেছেন, কেউবা ফিলিস্তিনি কাফিয়াহ পরেছেন। ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগানও ছিল সমাবেশে। অনেকে আবার গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধের দাবি জানায়। ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্যরা মঞ্চ থেকে ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করেন।
নিউজার্সির অবসরপ্রাপ্ত অর্থ ব্যবস্থাপক ওয়েন হফম্যান বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি কৃষক ও সাধারণ মানুষের চাকরি কেড়ে নেবে। মানুষ তাদের সঞ্চয় হারাচ্ছে।
ওহাইওর ২০ বছর বয়সী ট্রাম্প সমর্থক কাইল (ছদ্মনাম) ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ টুপি পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন। তিনি বলেন, অধিকাংশ মানুষই শান্ত, কয়েকজন শুধু গালিগালাজ করছেন।
ট্রাম্প ফ্লোরিডায় গলফ খেলার পর তার মার-এ-লাগো রিসোর্টে ফিরেছেন। এর কয়েক মাইল দূরেই ৪০০ জনের বেশি মানুষ প্রতিবাদে মাঠে নামে। ট্রাম্প-মাস্কের নেতৃত্বে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডোজ) নামে একটি সংস্থা ফেডারেল চাকরি কাটছাঁট করছে। ইতোমধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার কর্মীর মধ্যে ২ লাখের বেশি চাকরি বন্ধ করা হয়েছে। শুক্রবার ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস ২০ হাজার কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে।
বাল্টিমোরের নিকটবর্তী সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এসএসএ) সদর দপ্তরের বাইরেও বিক্ষোভ হয়। ৬৫ বছর বয়সী লিন্ডা ফালকাও বলেন, আমি ভীত, ক্ষুব্ধ। আমি আমার অর্থ চাই, আমার সুবিধা চাই!
হোয়াইট হাউজের সহকারী প্রেস সেক্রেটারি লিজ হাস্টন দাবি করেছেন, ট্রাম্প সামাজিক নিরাপত্তা বা মেডিক্যাড কাটছাঁট করবেন না। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ শুরুর আগেই ইউরোপের বার্লিন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, প্যারিস ও লন্ডনে আমেরিকানরা ট্রাম্পের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করেন, তার এই সাহসী পদক্ষেপ আমেরিকাকে নতুন পথে নিয়ে যাবে। তবে বিরোধীরা বলছেন, ট্রাম্পের নীতিই দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকে বিক্ষোভে ট্রাম্প বিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। বেশিরভাগ প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলÑ‘আমেরিকার কোনো রাজা নেই। এখানে ফ্যাসিবাদ চলবে না।’ ম্যানহাটনে ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভে হাঁটতে হাঁটতে এক প্রতিবাদী বলেন, আমার ভীষণ ভীষণ রাগ হচ্ছে। বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত একদল মানুষ নিজেদের ইচ্ছামতো আমাদের দেশটাকে চালাচ্ছেন। আমাদের দেশ আর মহান নেই। ওয়াশিংটনের রাস্তায় স্লোগান দিতে দিতে এক প্রৌঢ়া বলেন, নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে বাসে করে আমরা এখানে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। এই প্রশাসনের জন্য বিশ্বজুড়ে আমরা বন্ধু হারাচ্ছি। সকলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে।
দেশের মধ্যেও তারা বিভাজন তৈরি করছে। ক্ষমতায় আসার পর গর্ভপাত বিরোধী নীতি গ্রহণ করেছিলেন ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে লস অ্যাঞ্জেলেসে এক তরুণীর হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তাতে লেখা ছিল, আমার গর্ভ থেকে বেরিয়ে যাও। বস্টনের এক প্রতিবাদী বলেন, আমরা এখানে ফ্যাসিবাদ বন্ধ করার জন্য জড়ো হয়েছি। বিরোধীদের, অভিবাসীদের ট্রাম্প নির্বিচারে জেলে ভরছেন। আমরা তাকে থামাতে চাই। লন্ডনের রাস্তায় ট্রাম্প-বিরোধী মিছিল থেকে এক নারী বলেন, আমেরিকায় যা হচ্ছে, সেটা সকলের সমস্যা। আমরা তাই প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছি। অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্প পাগলামি করছেন। গোটা পৃথিবীকে উনি মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ট্রাম্প অবশ্য কোনো বিরোধিতায় আপাতত কান দিচ্ছেন না। হোয়াইট হাউসে বসে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আমার নীতি কখনও বদলাবে না। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের পণ্যে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপ করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে আমেরিকার অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ট্রাম্পের নীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে গোটা বিশ্বের বাণিজ্যে। ইতোমধ্যে আমেরিকার পণ্যে চীন পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছে।