আর বাঁচার আশা নেই

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের অবিরাম বোমাবর্ষণ ও হামলার মধ্যে ফিলিস্তিনিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেষ বার্তা ও বিদায় চিঠি লিখে রাখছেন। তাদের আশঙ্কা, এবার আর তারা বাঁচবেন না। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলের হামলা শুরুর পর থেকে গাজাবাসী একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি ইসরাইলের আক্রমণ ও তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের কথা বিশ্ববাসীকে জানাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় হতাশা ও মৃত্যুভয় নিয়ে লেখা পোস্টের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলের হামলায় অন্তত ১১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলের হামলা পুনরায় শুরু হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। খবর মিডল ইস্ট আই’র।
গাজার এক নারী নূরের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি এলাকায় পাশের ভবনে ইসরাইলি হামলা হচ্ছে। ভিডিওটির পটভূমিতে এক নারীর কান্নার শব্দ শোনা যায়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, ‘এবার মনে হচ্ছে আমরা বাঁচব না...’।
দক্ষিণ গাজার রাফাহ থেকে সাংবাদিক আবদুল্লাহ আলাত্তার শুক্রবার সকালে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘এবার আমরা টিকতে পারব না বলে মনে হচ্ছে।’ এটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে। দেইর আল-বালাহর ফুটবল সাংবাদিক আবুবকর আমেদ লিখেছেন, ‘গাজাবাসী জানে, বিশ্ব তাদের নিরাশ করেছে। তাই তাদের হত্যা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
এদিকে, ইসরাইলের অবরোধের কারণে গাজাবাসী শুধু বোমাবর্ষণই নয়, খাদ্য সংকটেরও শিকার হচ্ছে। এক ফিলিস্তিনি লিখেছেন, ‘মাথার ওপর বোমা, নিচে ক্ষুধা- গাজা আজ ধুঁকছে। আর কতদিন আমরা এভাবে টিকে থাকব? বিশ্বকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে!’  ইসরাইলের যুদ্ধ এখনো তার মিত্রদের সমর্থন ও অর্থায়নে চলছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের। গত মার্চে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেসের স্বাভাবিক পর্যালোচনা ছাড়াই ইসরাইলকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন দেয়। বৃহস্পতিবার স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত ৮.৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি বন্ধের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মাত্র ১৫ সিনেটর সমর্থন করায় প্রস্তাবটি ব্যর্থ হয়। 
অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত্যুর আগে বিদায় বার্তা ও প্রার্থনা পোস্ট করছেন। গাজার লেখক ও ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ বৃহস্পতিবার রাতে এক্সে লিখেছেন, ‘তার লেখা কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। প্রথমে উৎসাহী ছিলাম, যা লিখতাম সব শেয়ার করতাম। কিন্তু কী দেখলে বা পড়লে তোমরা জাগ্রত হবে- তা আমি জানি না। আমাদের জন্য নয়, তোমাদের বিবেকের জন্য, যাতে ঘুমোতে গিয়ে তোমাদের বিবেক কাঁদে না।’ ৩ এপ্রিল আরেক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘গোটা গণহত্যার মধ্যে এত কাছ থেকে কখনো মৃত্যুকে অনুভব করিনি, যতটা করছি এখন।’
ইউরোপীয় হাসপাতাল ও আল-আকসা হাসপাতালের চিকিৎসক হামজা আলশারিফ লিখেছেন, ‘গাজার সর্বত্র বোমাবর্ষণ তীব্র হচ্ছে, রক্তের ছোঁয়া সবখানে।’ ১৮ মার্চ থেকে তার প্রোফাইলে পিন করা পোস্টে তিনি লিখেছেন,  ‘আমি যদি মারা যাই, আমি শুধু একটি সংখ্যা নইÑ আমি একা এক গ্রহ, আমার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা ছিল। আমাকে তোমাদের দোয়া থেকে ভুলো না, আমার কথা বলতে থাক।’ 
গত মাসে ইসরাইলের মিসাইলে আল জাজিরার ২৩ বছরী সাংবাদিক হোসাম শাবাত নিহত হন। এর কয়েক ঘণ্টা আগে প্যালেস্টাইন টুডের সাংবাদিক মো. মানসুরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে স্ত্রী ও ছেলেসহ হত্যা করা হয়। হোসামের মৃত্যুর পর তার সহকর্মীরা তার আগে থেকে লেখা একটি বার্তা শেয়ার করেন- ‘আপনি যদি এটি পড়েন, তাহলে আমি ইসরাইলি বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়ে নিহত হয়েছি।’
প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি কবি ও শিক্ষাবিদ রিফাত আলারী গত ডিসেম্বরে ইসরাইলি হামলায় নিহত হন। তার ‘যদি আমাকে মরতেই হয়’ কবিতাটি ইসরাইলের যুদ্ধের মধ্যে প্রতিবাদ ও আশার প্রতীক হয়ে উঠেছিল।