ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

মৃত্যুর মিছিল ও আহাজারিতে গাজার বাতাসে শ্বাস নেয়া কঠিন

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ৬ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪৬, ৬ এপ্রিল ২০২৫

মৃত্যুর মিছিল ও আহাজারিতে গাজার বাতাসে শ্বাস নেয়া কঠিন

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী নিন্দা, সমালোচনা ও প্রতিবাদের পরও থামছে না ইসরাইলের হামলা। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে চলমান এই আগ্রাসনে রক্তপাত ও মৃত্যু যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে। গাজায় শিশু ও বেসামরিক মানুষের লাশের সারি প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে। চারদিকের ধ্বংসস্তূপ, স্বজন হারানো মানুষের কান্না ও দগ্ধ শহরের ছায়ায় গাজার বাতাসে এখন যেন শ্বাস নেওয়াও কঠিন।

ইসরাইলি বোমা হামলায় নিহত হয়েছে অনেক নিরীহ প্রাণ। আদরের ছোট বোন এবং নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বোনকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন হেমাম আল-রিফিকি। বোনের মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তাঁর চোখের সামনে আজও ভাসে ধ্বংসস্তূপের নিচে বস্তাবন্দি অবস্থায় পাওয়া সেই অক্ষত অনাগত শিশুর জামা-কাপড়—যা আগেই কিনে রাখা হয়েছিল সন্তানের আগমনের অপেক্ষায়।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র এক মাস আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁর বোনের। প্রথম সন্তানের জন্য কত স্বপ্ন, কত প্রস্তুতি—কিন্তু সেই শিশু পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বিদায় নিয়েছে। শুধু বোনই নয়, নিহত হয়েছে তাঁর স্বামী এবং তাঁদের মা-ও। হেমাম বলেন, “আমরা তো বেসামরিক মানুষ, তবুও আমাদের এভাবে মরতে হলো কেন?”

গত ১৮ মাসে ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার, যার মধ্যে ১৭ হাজারই শিশু। আহত হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ, আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে উপত্যকার ৯০ শতাংশ বাসিন্দা। গাজা উপত্যকাটি এখন ইতিহাসের এক নজিরবিহীন নির্মমতা ও নিঃশংসতার সাক্ষ্য বহন করছে।

এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে যেন প্রতিটি বাড়িই এখন কবরস্থান। প্রতিদিনের হামলা আর ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই কাটছে মানুষের দিনরাত। কোথাও নিরাপত্তা নেই— যেখানেই থাকুক, সেখান থেকেই চলে যেতে হয়। ঘুমিয়ে পরলে নিশ্চিত হওয়া যায় না, পরের দিন আর জেগে উঠতে পারবে কিনা।

গেল মার্চে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গের পর থেকে ইসরাইলি হামলা আরও তীব্র হয়েছে। দক্ষিণ গাজায় রাফাকে বিচ্ছিন্ন করতে তৈরি করা হয়েছে একটি নিরাপত্তা করিডোর, মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। জীবন বাঁচাতে মানুষ এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে, কিন্তু উপত্যকার ৩৬০ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে এখন আর কোথাও নেই নিরাপদ আশ্রয়।

গাজায় আজ শুধু ধ্বংস, মৃত্যু আর কান্না— এ যেন এক চলমান গণহত্যা, যার কোন শেষ নেই।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/-ww0tfARSgA?si=d8TlMEiARl8VJQbJ

এম.কে.

×