
মার্কিন শেয়ারবাজারে ভয়াবহ পতন। বিনিয়োগকারীদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি। বাজারে একের পর এক ধাক্কা আসছে, যা হয়তো বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট তাদের মার্কিন শেয়ারবাজারের মূল্যায়ন কমিয়ে এনেছে এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর বছরের শেষের লক্ষ্যমাত্রা ৬,৪০০ থেকে কমিয়ে ৫,৮০০ নির্ধারণ করেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পারস্পরিক শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে টালমাটাল করে দিতে পারে। ইউবিএস বলছে, বিনিয়োগকারীদের জন্য আগামী দিনগুলো হবে আরও কঠিন এবং বাজারে প্রবল অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
শেয়ারবাজারে টালমাটাল পরিস্থিতি
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর মার্কিন শেয়ারবাজার ভয়াবহ পতনের মুখে পড়ে।
ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ১,২০৪ পয়েন্ট বা ২.৯% কমেছে
নাসডাক কম্পোজিট ৪.৩% নেমে গেছে
এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৩.৩% নিচে নেমেছে, যা অন্য প্রধান বাজারগুলোর চেয়েও খারাপ
নাইকি, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ও ডলার ট্রি-র মতো বড় কোম্পানির শেয়ার ব্যাপক পতনের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বড় ধাক্কা খেয়েছে। এনভিডিয়া ৪.৬% কমেছে, এবং চলতি বছরেই কোম্পানিটির শেয়ার প্রায় ২২% পতনের সম্মুখীন হয়েছে।
কেন এত বড় ধস?
ওয়াল স্ট্রিটের অনেক বিশ্লেষক এতদিন ধরে ধরে নিয়েছিলেন যে ট্রাম্প তার শুল্ক নীতিকে শুধুমাত্র আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তবে নতুন ঘোষণার পর ধারণা বদলে গেছে। বিনিয়োগকারীরা এখন মনে করছেন, ট্রাম্প এই নীতিকে দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর রাখবেন এবং তার লক্ষ্য কেবল চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফিরিয়ে আনা।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি ট্রাম্প তার কঠোর শুল্ক নীতি বাস্তবায়ন করেন, তাহলে বাজার আরও ১০% পর্যন্ত পতনের মুখে পড়তে পারে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি তৈরি হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা ও কর্পোরেট লাভকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ইউবিএস-এর সতর্কবার্তা
ইউবিএস-এর প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মার্ক হেফেলে তার বিশ্লেষণে লিখেছেন, “শুল্ক বৃদ্ধির মাত্রা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি, যা পুরো বাজারকে হতবাক করেছে। শেয়ারবাজারে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে এবং কর্পোরেট আয়ের পূর্বাভাসও নিম্নমুখী হতে পারে।”
এই সতর্কবার্তাটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন অর্থনীতির মন্দার ঝুঁকি নিয়েও নিজেদের নীতিতে অনড়। ইউবিএস মনে করছে, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মার্কিন ব্যবসাগুলোর উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, যা সরাসরি তাদের মুনাফার ওপর প্রভাব ফেলবে। এর পাশাপাশি, বিনিয়োগকারীরা আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে, যা বাজারে ঝুঁকি প্রিমিয়াম বৃদ্ধি করবে।
ইউবিএস শুধুমাত্র এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের লক্ষ্যমাত্রা কমায়নি, বরং প্রযুক্তি খাত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং তাইওয়ান ইকুইটির রেটিংও কমিয়েছে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিকেও অস্থির করে তুলতে পারে।
চীনের বাজারে চাপ: বেইজিং ইতিমধ্যেই পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও বাড়িয়ে তুলবে
ইউরোপের অর্থনীতি: ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানির ওপরও উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে, যা ইউরোপীয় বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে
বৈশ্বিক বিনিয়োগ ঝুঁকি: বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটবে, যার ফলে মার্কিন ডলার ও স্বর্ণের দাম বেড়ে যেতে পারে
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যেই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।
এখন বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন,শেয়ারবাজার কি এই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, নাকি সামনে আরও বড় ধস অপেক্ষা করছে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সবকিছু নির্ভর করছে ট্রাম্প প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর। যদি শুল্ক নীতির কড়াকড়ি আরও বাড়ানো হয়, তাহলে বাজার আরও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তবে যদি আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা নমনীয় অবস্থান নেওয়া হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজার একেবারে অনিশ্চিত। এখন সময় বলবে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি কি বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন এক সংকটের দিকে ঠেলে দেবে, নাকি এই অস্থিরতা সাময়িক?
সূত্র:https://tinyurl.com/yc22z6y7
https://tinyurl.com/36thp9mx
আফরোজা