
ছবি: সংগৃহীত।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তনগুলোর কারণে বিদেশি নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসীদের ওপর কঠোর নীতি বাস্তবায়ন করছে, যা বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি
ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে একজন ভিসাধারীর চেয়ে অপরাধীরা বেশি অধিকার ভোগ করছেন। অভিবাসীদের আটক করে গুয়ান্তানামো বে নৌঘাঁটিতে পাঠানো হচ্ছে, যেখানে তাদের আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সীমিত। সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনপন্থি দুই শিক্ষার্থীর ওপর কঠোর অভিবাসন নীতির প্রভাব পড়েছে, যার মধ্যে একজন খলিল মাহমুদকে লুইজিয়ানার একটি আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
এছাড়া, এল সালভাদরগামী অভিবাসীদের একটি ফ্লাইট ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের মুখোমুখি হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রগামী পর্যটকদের সীমান্তে আটকে দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে, যা কূটনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার ও নিয়ম
১. বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও তল্লাশি হতে পারে
যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ ভিসাধারীদেরও অভিবাসন কর্মকর্তারা তল্লাশি করতে পারেন। সন্দেহজনক কিছু বহন করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য যেকোনো ভ্রমণকারীর ব্যাগপত্র পরীক্ষা করা হতে পারে। তবে জাতিগত, ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা লিঙ্গভিত্তিক কারণে কাউকে তল্লাশি করা আইনত নিষিদ্ধ।
২. ব্যক্তিগত মোবাইল ও ল্যাপটপ তল্লাশির সুযোগ রয়েছে
এয়ারপোর্টে সন্দেহভাজন কিছু বহন করা হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ তল্লাশি করা হতে পারে। কখনো কখনো অভিবাসন কর্মকর্তারা এসব ডিভাইসের পাসওয়ার্ডও চাইতে পারেন।
৩. মোবাইল আনলক করতে অস্বীকৃতি জানালে ফলাফল গুরুতর হতে পারে
যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক বা গ্রিনকার্ডধারী মোবাইল বা ল্যাপটপ আনলক করতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে তাদের প্রবেশে সরাসরি বাধা দেওয়া না হলেও নানা হয়রানি হতে পারে। তবে ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে আনলক করতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ভিসা বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৪. ভিসা-মুক্ত প্রোগ্রামের আওতায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য শর্তাবলী
প্রায় দুই ডজন দেশের নাগরিকরা ৯০ দিনের জন্য ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারেন, তবে তাদের অবশ্যই বৈদ্যুতিন ভ্রমণ কর্তৃপক্ষ (ইএসটিএ) অনুমোদন নিতে হবে। তবে এই অনুমোদন থাকলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে কাজ বা পড়াশোনা করতে পারবেন না।
৫. আটক হলে করণীয়
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের আটকের হার বেড়েছে। তাই অভিবাসী বা ভ্রমণকারী যেই হোন না কেন, একজন অভিবাসন আইনজীবীর তথ্য সংগ্রহ করে রাখা জরুরি। আটক হলে দ্রুত একজন আইনজীবীর সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৬. যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকারীদের অধিকারের সীমাবদ্ধতা
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকারীদের নির্দিষ্ট কিছু অধিকার থাকলেও তা সীমিত। বিমানবন্দরে কর্মকর্তারা যদি কোনো প্রশ্ন করেন এবং উত্তর না দেওয়া হয়, তবে ভিসা বাতিল হতে পারে।
৭. প্রবেশাধিকার বাতিল হলে করণীয়
যদি অভিবাসন কর্মকর্তারা কারও ভিসা বাতিল করে, তাহলে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে বা আটকও রাখা হতে পারে। সাধারণত সীমান্তে আটক ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক সুরক্ষা পান না এবং আইনজীবীর সহায়তাও সঙ্গে সঙ্গে পান না।
নিউইয়র্কের কারডোজো স্কুল অব ল-এর অধ্যাপক ও অভিবাসন আইনজীবী মাইকেল উইল্ডস বলেন, "একজন অপরাধীর যে পরিমাণ অধিকার রয়েছে, একজন ভিসাধারীর তা-ও নেই।" এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আগ্রহীদের অভিবাসন সংক্রান্ত নিয়ম ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
সূত্র: ইউএনবি, দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস
সায়মা ইসলাম