ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

রাশিয়ায় কারাগারেও নিষিদ্ধ নামাজ ও কোরআন, ভয়াবহ নির্যাতন মুসলিম বন্দীদের

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২৪ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০৮:৩৯, ২৪ মার্চ ২০২৫

রাশিয়ায় কারাগারেও নিষিদ্ধ নামাজ ও কোরআন,  ভয়াবহ নির্যাতন মুসলিম বন্দীদের

ছবি:সংগৃহীত

রাশিয়ায় ইসলাম ধর্ম দ্রুত প্রসারিত হলেও মুসলমানদের প্রতি নিপীড়নও বাড়ছে। রাষ্ট্রীয় দমননীতি থেকে শুরু করে কারাগারের ভয়াবহ নির্যাতন—সবখানেই মুসলমানদের টার্গেট করা হচ্ছে। কঠোর আইনের আড়ালে ধর্মীয় নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে, যেখানে কারাগারগুলো মুসলমানদের জন্য এক ভয়ঙ্কর নরকে পরিণত হয়েছে। 

 

 

 

ক্রিমিয়ান তাতার নেতা নরিমান জেলিয়ালের ঘটনা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। ২০২৩ সালে তাকে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার এক কঠোর শীতল কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে মুসলিম বন্দিদের জন্য খাবারের মান এতটাই শোচনীয় ছিল যে তিনি বাধ্য হয়ে শুধু রুটি ও চা খেয়ে বেঁচে থাকতেন। শুকরের মাংস দিয়ে তৈরি খাবার, যা ইসলামে হারাম, সেগুলোই ছিল প্রধান খাবার। জেলিয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল গ্যাস পাইপলাইন উড়িয়ে দেওয়া ও বিস্ফোরক পাচার। তবে ইউক্রেন সরকার এই মামলাকে সম্পূর্ণ সাজানো বলে দাবি করেছে। বর্তমানে তিনি ১৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন, যদিও তিনি শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ বলে আসছেন।

 

 

রাশিয়ার কারাগারগুলোর বর্বরতা নতুন কিছু নয়। সেখানে দুই ধরনের শাসন চলে—কালো কারাগার, যেখানে অপরাধীদের গ্যাং সংস্কৃতি চলে, এবং লাল কারাগার, যেখানে কারারক্ষীদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। লাল কারাগারগুলোতে বন্দিদের উপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন, নির্জন কারাবাস, অপুষ্টি, এমনকি যৌন নিপীড়ন। মুসলিম বন্দিদের উপর এই নির্যাতনের মাত্রা আরও ভয়াবহ। তাদের অনেককে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়।

 

 

রাশিয়ার জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মুসলিম হলেও কারাগারে মুসলিম বন্দির অনুপাত অনেক বেশি। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, ২ লাখ ৬০ হাজার বন্দির মধ্যে প্রায় ৩১ হাজার মুসলমান। আরেকটি ভয়ানক বিষয় হলো, রাশিয়ার কারাগারে কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তবে তাকে উগ্রপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তার শাস্তি বাড়ানো হয় এবং গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রাখা হয়। অন্যদিকে, কেউ খ্রিস্টান হলে তাকে সম্মান দেওয়া হয়।

মধ্য এশিয়ার মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকরাও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে ঢোকানো হচ্ছে। অনেক কারাগারে মুসলিম বন্দিদের নামাজ পড়তে দেওয়া হয় না। রমজানে রোজা রাখাও কঠিন। কিছু জায়গায় বিছানা ছেড়ে ওঠা নিষিদ্ধ থাকায় ফজরের নামাজ পড়লেও শাস্তির মুখে পড়তে হয়। এ ছাড়া কারাগারগুলোতে কোরআন পড়া বা আরবি শেখাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

 

 

ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার কারাগারে বন্দির সংখ্যা কমলেও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বহু মুসলিম বন্দিকে যুদ্ধের নামে গোপনে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। রুশ সামরিক বাহিনীতে জোরপূর্বক যুক্ত করার অভিযোগও উঠেছে। রাশিয়ায় মুসলিমদের এই নিপীড়ন দীর্ঘদিন ধরে চলছে, কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায় যেন এ নিয়ে নির্বিকার। মানবাধিকার সংস্থাগুলো মাঝে মাঝেই প্রতিবাদ করলেও বড় শক্তিগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর অবস্থান নেয় না। ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলো যেখানে সামান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরব হয়, সেখানে রাশিয়ার কারাগারে মুসলিমদের উপর চলা এই নৃশংস নির্যাতন তাদের চোখ এড়িয়ে যায়।

মুসলিম বিশ্বও এই ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে রাশিয়ার কারাগারগুলোতে মুসলিমদের উপর দমননীতি চালিয়ে যাওয়া আরও সহজ হয়ে উঠেছে। ২০০০ সাল থেকে রাশিয়ার কারাগারে মুসলিম বন্দির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এত বছরেও রুশ প্রশাসন এই সমস্যার কোনো সমাধান করেনি, বরং দিন দিন নিপীড়ন আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে।

সূত্র :https://youtu.be/XOCCeGgYD7Y?si=-z-iPItT8OSWyi4Q

আঁখি

×