ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

ইজরায়েলের প্রধান সমর্থক হয়েও কেন সমালোচনায় নেই যুক্তরাষ্ট্র!

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ২৩ মার্চ ২০২৫

ইজরায়েলের প্রধান সমর্থক হয়েও কেন সমালোচনায় নেই যুক্তরাষ্ট্র!

ছবি: সংগৃহীত

ইজরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থন দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। তবে, বেশিরভাগ দেশ, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর দেশগুলো, প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করতে পিছপা থাকে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইজরায়েলকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে, সেখানে কেন দেশগুলো জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না?

অনেক দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে, যা তাদেরকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে নিরুৎসাহিত করে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), কাতার এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করে, কারণ এতে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইরানের মতো দেশ ব্যতীত অধিকাংশ মুসলিম দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চায় না, কারণ এটি তাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সৌদি আরব প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয় করে, যা তাদের সামরিক শক্তি বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করলে অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া বা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে।

পশ্চিমা মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণে অনেক দেশের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে চায় না। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে এবং অন্য দেশগুলোর নেতাদের অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। অনেক দেশে জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করলেও তাদের সরকার এ বিষয়ে নীরব থাকে। কারণ, তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না।

মুসলিম বিশ্ব নিজেই বিভক্ত, যার ফলে তারা একতাবদ্ধ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে না। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিদ্যমান। ইরান যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়, সেখানে সৌদি আরব ও তার মিত্ররা এ বিষয়ে নীরব থাকে বা কৌশলগত সমর্থন প্রদান করে।
অনেক আরব দেশের জন্য ফিলিস্তিনি ইস্যু এখন আর প্রধান অগ্রাধিকার নয়। তারা নিজেদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সরাসরি সমালোচনা না করার পথ বেছে নেয়। তুরস্ক, পাকিস্তানসহ কিছু মুসলিম দেশ মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে। ফলে তারা প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করতে চায় না।

বিশ্বে জনসাধারণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা ব্যাপকভাবে থাকলেও সরকারগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৌশলগত কারণে নীরব থাকে। সামরিক ও অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, ভূরাজনৈতিক সমীকরণ এবং কূটনৈতিক স্বার্থের কারণে মুসলিম দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে শক্ত অবস্থান নিতে চায় না। তবে, সামাজিক মাধ্যম ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের কারণে এখন অনেক সাধারণ মানুষ এবং সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা জোরদার করছে, যা ভবিষ্যতে কূটনৈতিক পরিবর্তন আনতে পারে।

ফারুক

×