
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় প্রতিদিন নিরীহ শিশুদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। বোমা হামলা, খাদ্য ও ওষুধের সংকট, এবং নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও, পশ্চিমা বিশ্বের সরকার ও মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর প্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে নীরব। কিন্তু কেন?
পশ্চিমা দেশগুলোর আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থ অনেক সময় মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছে। তারা ইসরায়েলকে তাদের মধ্যপ্রাচ্য নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করে, যার ফলে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগকে উপেক্ষা করা হয়। ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। ইসরায়েল পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ক্রয় করে এবং প্রযুক্তি আদান-প্রদান করে। এ কারণে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে পশ্চিমা দেশগুলো পিছপা হয়।
শ্চিমা গণমাধ্যমের অনেক প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাবের কারণে ফিলিস্তিনের ঘটনাগুলোকে নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরতে পারে না। তারা ইসরায়েলের নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গি বেশি প্রচার করে, কিন্তু ফিলিস্তিনি শিশুদের দুর্ভোগ তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পায়। পশ্চিমা গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ ইসরায়েলপন্থী অবস্থান গ্রহণ করে এবং ফিলিস্তিনের সংকটকে একপাক্ষিকভাবে উপস্থাপন করে। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো প্রায়ই ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে চিত্রিত করে, কিন্তু ইসরায়েলের হামলাকে ‘আত্মরক্ষা’ বলে বৈধতা দেয়। যখন ফিলিস্তিনে বোমা হামলায় শত শত শিশু নিহত হয়, তখন এ খবর কম গুরুত্ব পায়। কিন্তু ইসরায়েলে একটি রকেট হামলায় কেউ আহত হলে সেটি বড় করে প্রচার করা হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক মানুষ আরবি ভাষায় প্রচারিত সংবাদ বোঝে না, ফলে তারা ফিলিস্তিনের বাস্তবতা সম্পর্কে অন্ধকারেই থেকে যায়।
পশ্চিমা বিশ্বে অনেক জায়গায় ইসলামফোবিয়া এবং মুসলিমদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা বিদ্যমান, যা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি কমিয়ে দেয়। মুসলিম শরণার্থীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব: সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে শরণার্থীদের প্রতি বিরূপ মনোভাব থাকার ফলে ফিলিস্তিনিদের সংকটকেও গুরুত্বহীন মনে করা হয়। হামাস বা অন্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রমকে হাইলাইট করে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামকে ‘উগ্রবাদী’ হিসেবে দেখানোর প্রবণতা রয়েছে, যা পশ্চিমা জনগণের মধ্যে সহানুভূতি কমিয়ে দেয়। যদিও মূলধারার মিডিয়া ফিলিস্তিনের সত্য ঘটনা প্রকাশে অনীহা দেখায়, তবু সামাজিক মাধ্যমে অনেক ব্যক্তি ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ফিলিস্তিনি শিশুদের কষ্টের বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে।
ফিলিস্তিনি শিশুদের কান্না পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে কম আসে কারণ এটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং গণমাধ্যমের পক্ষপাতদুষ্ট কাঠামোর সঙ্গে জড়িত। তবে সামাজিক মাধ্যমের বিকাশ এবং সচেতন মানুষের প্রচেষ্টায় এখন সত্য ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বে সাধারণ মানুষ যদি এ বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখে, তবে ন্যায়বিচারের দাবিও আরও জোরালো হতে পারে।
ফারুক