ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩১

স্ত্রী ও প্রেমিকের নিষ্ঠুরতার বলি স্বামী

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০৪:৪০, ২৩ মার্চ ২০২৫

স্ত্রী ও প্রেমিকের নিষ্ঠুরতার বলি স্বামী

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উত্তর প্রদেশের মিরাটে এক নারীর বিরুদ্ধে তাঁর নাবিক স্বামীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। প্রেমিকের সঙ্গে মিলে পরিকল্পিতভাবে স্বামীকে হত্যা করার পর দেহ ১৫ টুকরো করে ড্রামে ভরে সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়। এই ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত নারী মুসকান রাস্তোগী ও তাঁর প্রেমিক সাহিল শুক্লাকে আটক করেছে পুলিশ।

২০১৬ সালে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন সৌরভ রাজপুত ও মুসকান রাস্তোগী। সংসার জীবনের সুখের আশায় নাবিকের চাকরি ছেড়ে স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন সৌরভ। তবে, তাঁর এই সিদ্ধান্ত পরিবারের সদস্যদের ভালো লাগেনি, যা ধীরে ধীরে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে, স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার শুরু করেন তিনি।

২০১৯ সালে তাঁদের কন্যাসন্তানের জন্ম হয়, তবে দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েন তখনও কাটেনি। সৌরভ জানতে পারেন, তাঁর বন্ধু সাহিল শুক্লার সঙ্গে মুসকানের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্যে একাধিকবার বাকবিতণ্ডা হয়, এমনকি বিচ্ছেদের কথাও ওঠে। কিন্তু মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সৌরভ সব ভুলে সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন এবং পুনরায় নাবিকের চাকরিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

২০২৩ সালে কাজের জন্য বিদেশ চলে যান সৌরভ। তবে মুসকান ও সাহিলের সম্পর্ক তখন আরও গভীর হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে, সৌরভকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, মেয়ের জন্মদিন উদযাপন করতে দেশে ফেরেন সৌরভ। এরপর ৪ মার্চ রাতে, মুসকান স্বামীর খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। সৌরভ ঘুমিয়ে পড়লে, সাহিলকে নিয়ে ছুরি দিয়ে তাঁকে হত্যা করেন মুসকান। হত্যার পর, দেহ ১৫ টুকরো করে একটি ড্রামে ভরে সেটিতে সিমেন্ট ঢেলে দেন তাঁরা, যাতে কোনোভাবেই দেহের অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়া যায়।

সৌরভের পরিবার বেশ কয়েকদিন ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পরিবারের সদস্যরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে, তদন্ত শুরু হয়।

মুসকান প্রথমে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন এবং জানান, তাঁর স্বামী পাহাড়ে বেড়াতে গেছেন। সন্দেহ দূর করতে তিনি ও সাহিল সৌরভের ফোন ব্যবহার করে মানালিতে ঘুরতে যান এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে থাকেন।

তবে, পুলিশের তদন্তে একের পর এক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। সন্দেহের ভিত্তিতে মুসকান ও সাহিলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, তারা হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে, তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ড্রামের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়।

সিমেন্টে সিল করা ড্রামটি খুঁজে পেলেও সেটি হাতুড়ি বা ছেনি দিয়ে ভাঙা সম্ভব হয়নি। পরে ড্রিল মেশিনের সাহায্যে সিমেন্ট কেটে ১৪ দিন পর সৌরভের দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশ।

মিরাট সিটি পুলিশের প্রধান আয়ুষ বিক্রম সিং জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয়েছে এবং অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করা হবে। পুলিশের মতে, এটি প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতার এক নির্মম উদাহরণ।

সূত্র : https://youtu.be/agkzo5OjyPQ?si=SpZQqe4AQhTfNIYu

রিফাত

×