
প্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্ক একদিকে ভারতে তার স্টারলিংক ও টেসলা চালুর পরিকল্পনায় ব্যস্ত, অন্যদিকে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই করছেন সেন্সরশিপের অভিযোগে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং মাস্কের মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (পূর্বে টুইটার) এখন একটি বড় আইনি লড়াইয়ে মুখোমুখি।
২০২৫ সালের ৫ই মার্চ এক্স কর্পোরেশন কর্নাটক হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। তাদের অভিযোগ, ভারতের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বেআইনিভাবে তাদের সেন্সরশিপ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এক্সের দাবি, ভারত সরকার 'সাহযোগ পোর্টাল' নামে একটি নতুন অনলাইন সিস্টেম চালু করেছে, যা বিচার বিভাগীয় বা উচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন ছাড়াই কন্টেন্ট ব্লক করার অনুমতি দিচ্ছে। এর অর্থ হলো, এখন যেকোনো সরকারি দপ্তর বা রাজ্য পুলিশ সরাসরি কন্টেন্ট সরানোর নির্দেশ দিতে পারে, কোনো পূর্ব সতর্কতা বা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই।
এক্স আরও অভিযোগ করেছে, ভারত সরকার তথ্য প্রযুক্তি আইনের ধারা ব্যবহার করে অনলাইন কন্টেন্ট সেন্সর করছে, অথচ এটি করার জন্য ৬৯এ ধারার নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক। ৬৯এ ধারা অনুযায়ী, সরকার যদি কোনো কন্টেন্ট মুছতে চায়, তাহলে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে এবং কন্টেন্ট অপসারণের আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ দিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে। কিন্তু সরকার ৭৯(৩)(বি) ধারা ব্যবহার করে এই নিয়ম না মেনেই কন্টেন্ট সরানোর নির্দেশ দিচ্ছে, যা এক্সের মতে অবৈধ।
এক্সের আরেকটি অভিযোগ হলো, 'সাহযোগ পোর্টাল' নামের এই সরকারি অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে সরকার স্বচ্ছতা ও আইনি নিয়ম না মেনেই সেন্সরশিপ চাপিয়ে দিচ্ছে। এই পোর্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা নিজেদের ইচ্ছামতো কন্টেন্ট মুছে ফেলতে পারছেন, যা কোনো আইনি তদারকি ছাড়াই ঘটছে।
এক্স আদালতের কাছে তিনটি বড় দাবি জানিয়েছে:
১. ৭৯(৩)(বি) ধারা ব্যবহার করে সরকার যেন কন্টেন্ট ব্লক করার নির্দেশ না দিতে পারে।
২. 'সাহযোগ পোর্টাল' এর মাধ্যমে কন্টেন্ট সরানোর ব্যবস্থা বন্ধ করা হোক, যতদিন না আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়।
৩. ৬৯এ ধারা যেন একমাত্র বৈধ সেন্সরশিপ পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত হয়, যাতে সরকার আইন মেনে চলতে বাধ্য হয়।
আগামী ২৭ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। আদালত বলেছে, যদি সরকার এক্সের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়, তাহলে এক্স আবার আদালতে যেতে পারবে। এটি প্রথম নয় যে এক্স ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করল। ২০২২ সালেও তারা কন্টেন্ট সরানোর সরাসরি আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিল।
এই মামলা বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, যদি এক্স এই মামলায় জেতে, তাহলে ভারত সরকারকে কন্টেন্ট সরানোর ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বচ্ছতা ও নিয়ম মেনে চলতে হবে। এটি অনলাইন স্বাধীনতা ও সেন্সরশিপের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার একটি মাইলফলক হতে পারে।
আঁখি