ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

লেখাপড়ার খরচ আর দেবে না হোয়াইট হাউস

শিক্ষা দপ্তরই তুলে দিলেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ২০:২১, ২১ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২১:১২, ২১ মার্চ ২০২৫

শিক্ষা দপ্তরই তুলে দিলেন ট্রাম্প

নির্বাহী আদেশে সই করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ঘোষণা করেছিলেন আগেই। বৃহস্পতিবার আদেশনামায় স্বাক্ষর করে তা কার্যকরও করলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেল আমেরিকার শিক্ষা  দপ্তর। এই নির্দেশ কার্যকর হওয়ার ফলে শিক্ষা খাতে আর কোনো ব্যয় বরাদ্দ করবে না আমেরিকার কেন্দ্রীয় প্রশাসন। এর ফলে সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বিপদে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ফের তুলে দেওয়া হচ্ছে আমেরিকার প্রদেশগুলোর ওপরে। স্থানীয় প্রশাসনই এবার আমেরিকার শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামাবে। ১৯৭৯ সালে আমেরিকার শিক্ষা দপ্তরকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। এবার সেই দপ্তরেই তালা ঝোলালেন ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার আদেশনামায় সই করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এটা (শিক্ষা দপ্তর) বন্ধ করতে চলেছি। যত দ্রুত সম্ভব এটা হবে। এই দপ্তর রেখে ভাল কিছু হচ্ছিল না।’ একই সঙ্গে তিনি জানান, আমেরিকায় শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার তিনি তুলে দিচ্ছেন প্রদেশগুলোর হাতে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। যদিও তার এই প্রচেষ্টা আদালতের চ্যালেঞ্জ ও সাংবিধানিক বাধার সম্মুখীন হতে পারে।
বৃহস্পতিবারের ওই অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চারপাশে ডেস্কে শিশুদের অর্ধবৃত্তাকারভাবে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল ও তাদের প্রত্যেকের হাতে নির্বাহী আদেশের নিজস্ব সংস্করণ স্বাক্ষরের জন্য ছিল। ট্রাম্প যখন আদেশে স্বাক্ষর করার জন্য তার মার্কার খোলেন, তখন শিশুরাও তাকে অনুসরণ করে। যখন তিনি ক্যামেরার জন্য সম্পূর্ণ আদেশটি তুলে ধরেন, তখন বাচ্চারাও তাই করছিল।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে ট্রাম্প বলেছেন, আমি ফেডারেল শিক্ষা বিভাগকে একবারে নির্মূল করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করব। এটা অদ্ভুত শোনাচ্ছে, তাই না? শিক্ষা বিভাগ, আমরা এটি নির্মূল করতে যাচ্ছি এবং সবাই জানে এটি সঠিক। ডেমোক্র্যাটরাও জানে এটি সঠিক।
কিন্তু ডেমোক্র্যাট ও শিক্ষা সমর্থকরা বেশ দ্রুতই এই পদক্ষেপকে কেবল প্রেসিডেন্টের অতিরিক্ত ক্ষমতার আরেকটি উদাহরণ নয় বরং সারাদেশের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করার প্রচেষ্টা হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের ওই অনুষ্ঠানের কয়েক মিনিটের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার লেখেন, শিক্ষা বিভাগ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও বিপর্যয়কর পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি। এটি শিশুদের ক্ষতি করবে।
আল জাজিরা জানায়, ফেডারেল সরকারের মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা উদ্যোগকে একীভূত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের অধীনে শিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি করার মাধ্যমে সে সময় তিনি একটি নতুন মন্ত্রিসভা-স্তরের অবস্থান তৈরি করেন। তখনো রিপাবলিকানরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে এই পদক্ষেপ রাজ্য ও স্থানীয় স্কুল বোর্ডগুলোর ক্ষমতা কেড়ে নেবে।
আমেরিকার প্রচলিত বিধি অনুযায়ী, মার্কিন কংগ্রেস বা আইনসভার অনুমতি ব্যতীত কোনো প্রশাসনিক দপ্তর খোলা বা বন্ধ করা যায় না। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আদেশনামায় স্বাক্ষর করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীদের বেতন এবং অন্য ব্যয় বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায়। আমেরিকার এই দপ্তরে এতদিন ৪২০০ জনেরও বেশি কাজ করতেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি এই দপ্তরের জন্য ২৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২২ লক্ষ কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হয়েছিল। এ বার এই বরাদ্দই বন্ধ হতে চলেছে।
দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েই প্রশাসনিক ব্যয়ে লাগাম পরানোর কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। মনে করা হচ্ছে, সেই পরিকল্পনারই অংশ শিক্ষা দপ্তর বন্ধ করে দেওয়া।

×