
একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিজয়ে, সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) খার্তুমে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস পুনরুদ্ধার করেছে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর কাছ থেকে, যা চলমান সংঘর্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বলে বিবেচিত হচ্ছে।
সুদানের সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে যে তাদের বাহিনী কয়েক দিনের তীব্র লড়াইয়ের পর সফলভাবে আরএসএফ যোদ্ধাদের প্যালেস চত্বর থেকে বিতাড়িত করেছে। প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস, যা দীর্ঘদিন ধরে সুদানের ক্ষমতার প্রতীক, গত এক বছর ধরে আরএসএফ-এর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই পুনরুদ্ধার সেনাবাহিনীর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর উপর দখল দৃঢ় করবে এবং যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিতে পারে।
একটি কৌশলগত ও প্রতীকী বিজয়
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই উন্নয়ন কৌশলগত এবং প্রতীকী উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস, যা কেন্দ্রীয় খার্তুমে অবস্থিত, সুদানের শাসনের কেন্দ্রে ছিল বহু বছর ধরে। এর পুনরুদ্ধার প্রমাণ করে যে সেনাবাহিনী এখনও শক্তিশালী এবং প্রতিরোধের মুখেও অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম।
“এটি যুদ্ধের একটি বড় মোড়,” বললেন সুদানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবদেল করিম ইদ্রিস। “এটি শুধু সরকারি বাহিনীর মনোবল বাড়াবে না, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বার্তা দেবে যে সুদানের ক্ষমতার ভারসাম্যে সেনাবাহিনী এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”
এই বিজয় সত্ত্বেও, আরএসএফ এখনও পশ্চিম সুদানের বৃহৎ অংশ, বিশেষত দারফুর অঞ্চল, নিয়ন্ত্রণ করছে, যেখানে তারা একটি সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বিভিন্ন অংশে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে, এবং মানবিক পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।
মানবিক সংকটের অবনতি
সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং আরএসএফ প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো-এর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ফলে শুরু হওয়া এই সংঘাত লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, ৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষ খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা সংকটে ভুগছে।
খার্তুমের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক লড়াইয়ের পর রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে, আর সাধারণ মানুষ দুই পক্ষের মধ্যে আটকে পড়েছে। হাসপাতালগুলো সরবরাহের অভাবে সংকটে পড়েছে, এবং মানবিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে যদি শান্তি আলোচনা সফল না হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও শান্তি আহ্বান
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চলমান সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন, জাতিসংঘ এবং বেশ কয়েকটি পশ্চিমা সরকার অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয় পক্ষকে মানবিক সহায়তার প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
“আমরা সুদানের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং উভয় পক্ষকে সুদানের জনগণের স্বার্থে শত্রুতা বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি,” এক বিবৃতিতে বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
যদিও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, পূর্ববর্তী শান্তি আলোচনাগুলো কোনো স্থায়ী চুক্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। সাম্প্রতিক সামরিক উন্নয়নগুলো দেখাচ্ছে যে সুদানের যুদ্ধ এখনও শেষ হওয়ার পথে নয়, যদিও এসএএফ তাদের সাম্প্রতিক বিজয় উদ্যাপন করছে।
যুদ্ধ অব্যাহত থাকায়, সুদানের জনগণ এখনও সহিংসতার মাঝে আটকে আছে, শান্তি এবং স্থিতিশীলতার প্রত্যাশায়।
সাজিদ