ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১

পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার যে ঘনিষ্ঠতায়, টেনশনে মোদি

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ২০ মার্চ ২০২৫

পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার  যে ঘনিষ্ঠতায়, টেনশনে মোদি

ছবি:সংগৃহীত

ভারত জন্মের পর থেকেই রাশিয়ার (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন মিত্র। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারত যতবারই বিপদে পড়েছে, ততবারই রাশিয়া ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। স্টালিন থেকে পুতিন পর্যন্ত প্রতিটি রুশ শাসকের মনেই ভারতের জন্য বিশেষ স্থান ছিল।

 

তবে একবিংশ শতাব্দীতে ভূরাজনীতির পরিবর্তন ঘটেছে, শত্রু-মিত্রের সংজ্ঞায় এসেছে নতুন মাত্রা। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যা বিশ্লেষকদের মতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

 

 


সম্প্রতি রুশ নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ পাকিস্তানের করাচি বন্দরে পৌঁছেছে। এই জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রিগেট আরএফএস রেজকি, আরএফএস আলদারশিদেন জাফ এবং সি ট্যাংকার আরএফএস পেজেনগা। রুশ নৌবাহিনীর এই সফরকে বিরল ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, কারণ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে রাশিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের ফলে মস্কো ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত হচ্ছে।

পাকিস্তান নৌবাহিনীর মিডিয়া উইং ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এই সফরকে "সৌজন্য সফর" হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাদের পোস্টে জানানো হয়েছে, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর জাহাজ যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নেবে, যা উভয় দেশের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। পাকিস্তানের রুশ দূতাবাস এই ঘটনাকে একটি "মাইলফলক" হিসেবে অভিহিত করেছে।

 

 


২০২৩ সালে ভারত-রাশিয়া মৈত্রী চুক্তির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নয়া দিল্লিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে রাশিয়া বদ্ধপরিকর। তিনি আরও উল্লেখ করেন, মস্কো মনে করে যে দুর্বল পাকিস্তান এ অঞ্চলের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, যা ভারত ও আফগানিস্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে এই বক্তব্যের পর রাষ্ট্রদূত দাবি করেন, রাশিয়া ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করবে না এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ বিরোধী উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা হবে।

 

 


পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে ভারতকে একটি সূক্ষ্ম বার্তা দিচ্ছে। বর্তমানে নয়া দিল্লি মস্কোর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, যা রাশিয়াকে পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে নিষ্ক্রিয়তার কারণে পাকিস্তানও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশ একে অপরের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে চাইছে।


ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গভীর ও আস্থাভিত্তিক হলেও বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উভয় দেশের কৌশলগত অগ্রাধিকার পরিবর্তন হচ্ছে। রাশিয়ার পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়া ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেবে না। বরং, এই সম্পর্কের মাধ্যমে রাশিয়া ভারতকে তার কৌশলগত গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে চাইছে। ভবিষ্যতে এই ত্রিমুখী সম্পর্ক কীভাবে বিকশিত হয়, তা এশিয়ার ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

আঁখি

×