ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

ইসরায়েলের জন্য আমেরিকার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার রহস্য!

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ১৯ মার্চ ২০২৫

ইসরায়েলের জন্য আমেরিকার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার রহস্য!

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা কৌশলগত নয়, এটি বহুস্তরীয় এবং দীর্ঘমেয়াদি। অনেকেই বলে থাকেন, "আমেরিকা ইসরায়েলের জন্য সবকিছু করতে পারে!" কিন্তু এর পেছনে কী রহস্য? কেন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এত নিঃস্বার্থভাবে সমর্থন দেয়?  আমেরিকার বেশিরভাগ জনগণ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, বিশেষত ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টানরা ইসরায়েলকে বাইবেলের পবিত্র ভূমি হিসেবে বিবেচনা করে। তারা বিশ্বাস করে যে ইসরায়েলের অস্তিত্ব এবং সমৃদ্ধি ঈশ্বরের পরিকল্পনার অংশ। মার্কিন রাজনীতিতে ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টানদের বড় অংশের প্রভাব রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির হাতে ছয় মিলিয়ন ইহুদি নিহত হয়, যা বিশ্বব্যাপী ইহুদি সম্প্রদায়কে গভীরভাবে আঘাত করে। আমেরিকা তখন থেকেই ইহুদিদের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্র গঠনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করে। ১৯৪৮ সালে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হয়, তখন আমেরিকা প্রথম দেশগুলোর মধ্যে ছিল যারা একে স্বীকৃতি দেয়।

মার্কিন রাজনীতিবিদদের একটি বড় অংশ ইহুদিদের দ্বারা প্রভাবিত। ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করে, যা খ্রিস্টান ধর্মীয় অনুভূতির কারণেই সম্ভব হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে AIPAC (American Israel Public Affairs Committee) নামে শক্তিশালী একটি লবি গ্রুপ রয়েছে। মার্কিন রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি দান করা গ্রুপগুলোর মধ্যে AIPAC অন্যতম। কংগ্রেস সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারে ইসরায়েলপন্থী লবি বিশাল অনুদান দেয়। মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের ৯০%-এর বেশি ইসরায়েলপন্থী অবস্থান নেয়, কারণ ইসরায়েলি লবি তাদের সমর্থন করে। যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে পড়ে!

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, সিরিয়া, লেবাননের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী। ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে নিজের আধিপত্য বজায় রাখে। ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও সামরিক কার্যক্রমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, ইসরায়েলের মতো একটি দেশ থাকলে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক উপস্থিতি শক্তিশালী থাকবে। 

ইসরায়েল বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ দেশ, যেখানে সিলিকন ভ্যালির অনেক প্রযুক্তি কোম্পানির শাখা আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে বিনামূল্যে বাণিজ্য চুক্তি (Free Trade Agreement - FTA) রয়েছে। ইসরায়েলি স্টার্টআপগুলোতে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা বিলিয়ন ডলার ঢালছে। অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র নিঃস্বার্থভাবে ইসরায়েলকে ভালোবাসে। কিন্তু বাস্তবে, এই সম্পর্কের পেছনে রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও আদর্শিক স্বার্থ জড়িত।

ফারুক

×