
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইসরায়েলকে অস্ত্র দিচ্ছে, অন্যদিকে মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিচ্ছে—এটি দ্বৈতনীতি ও স্ববিরোধিতা স্পষ্ট করে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে একটি স্ববিরোধিতা পরিলক্ষিত হয়। একদিকে তারা ইসরায়েলকে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তার ঘোষণা দেয়। এই দ্বৈতনীতি শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্ববিরোধিতাই নয়, বরং এটি গাজার চলমান মানবিক সংকটের সমাধানকে আরও জটিল করে তুলছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরায়েলকে বিশাল অঙ্কের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে, যা মূলত গাজায় হামলা ও ফিলিস্তিনিদের দমন-পীড়নের কাজে ব্যবহৃত হয়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাজেটের একটি বিশাল অংশ মার্কিন সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে, যা গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর ব্যবহৃত হয়।
ইসরায়েলের প্রতি সরাসরি সামরিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় "মানবিক সহায়তা" পাঠানোর ঘোষণা দেয়। তবে এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবে কার্যকর হয় না বা প্রভাব খুবই নগণ্য থাকে। এই সহায়তা জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়, কিন্তু ইসরায়েলি অবরোধের কারণে বেশিরভাগ সাহায্য পৌঁছায় না। ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মানবিক সহায়তা গাজার জনগণের কাছে পৌঁছাতে বাধা দেয়। ইসরায়েল সীমান্ত বন্ধ রেখে খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দেয়। গাজায় জ্বালানি প্রবেশ বন্ধ থাকায় হাসপাতালগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ফলে মার্কিন মানবিক সহায়তা কেবল ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, বাস্তবতা ভিন্ন।
যুক্তরাষ্ট্র তার বৈদেশিক নীতিতে মানবিক মূল্যবোধের চেয়ে স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। যখন কোনো সংকট তাদের ভূরাজনৈতিক অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তখন তারা মানবিক সাহায্য প্রদান করে বা সামরিক হস্তক্ষেপ করে। অন্যদিকে, যেখানে তাদের স্বার্থ নেই, সেখানে নিরব ভূমিকা পালন করে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রায়শই ইসরায়েলের সামরিক হামলাকে "আত্মরক্ষার অধিকার" বলে বৈধতা দেয়। ইসরায়েল যখন গাজায় বিমান হামলা চালায়, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্র দপ্তর শুধু "উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের" আহ্বান জানায়, কিন্তু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় না।
মার্কিন মূলধারার গণমাধ্যমগুলো সাধারণত ইসরায়েলের পক্ষে সংবাদ পরিবেশন করে, যা জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু হলে সংবাদ শিরোনামে "সংঘর্ষ" বা "সহিংসতা" বলা হয়, যেন এটি একটি সমান পক্ষের লড়াই। ইসরায়েলি নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি হলে সেটিকে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়, কিন্তু গাজায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যু অনেক সময় উপেক্ষা করা হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো হামাসকে "সন্ত্রাসী সংগঠন" হিসেবে চিত্রিত করে, কিন্তু ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে আলোচনা কম করে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে "যুদ্ধাপরাধ" বললেও মার্কিন সরকার এ নিয়ে কার্যকর কিছু করে না।
যুক্তরাষ্ট্র গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের সময় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না, কারণ তাদের পররাষ্ট্রনীতি মূলত ইসরায়েলের প্রতি গভীর সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক দ্বারা পরিচালিত হয়। ইসরায়েলপন্থী লবির প্রভাব, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ, এবং গণমাধ্যমের একপাক্ষিক প্রচার এই অবস্থানকে আরও সুসংহত করেছে। ফলে গাজায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ মারা গেলেও, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যায় না।
ফারুক