
ছবি: সংগৃহীত।
গত বছরের ৫ জুন বোয়িং নির্মিত স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন মার্কিন নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনীতা উইলিয়ামস। মিশনটি মূলত আট দিনের জন্য পরিকল্পিত ছিল, কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তারা প্রায় নয় মাস কক্ষপথে অবস্থান করতে বাধ্য হন।
অবশেষে, নাসার নভোচারী নিক হেইগ ও রুশ মহাকাশচারী আলেক্সান্দর গর্বুনভের সঙ্গে স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুলে চড়ে তারা পৃথিবীতে ফেরেন। সমস্ত শঙ্কা কাটিয়ে ক্যাপসুলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং নির্ধারিত চারটি প্যারাসুট খুলে গিয়ে ফ্লোরিডার উপকূলে নিরাপদ অবতরণ নিশ্চিত করে। পরে একটি পুনরুদ্ধারকারী জাহাজ ক্যাপসুলটিকে পানি থেকে তুলে নেয়।
ক্যাপসুলের দরজা খোলার পর মহাকাশচারীরা বেরিয়ে আসেন, সেই মুহূর্তে তারা হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। তাদের সহকর্মী ক্রু সদস্যরা বেরিয়ে আসতে সহায়তা করেন।
নাসার বাণিজ্যিক ক্রু প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক স্টিভ স্টিচ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "ক্রুরা দুর্দান্ত কাজ করেছে।" মাত্র আট দিনের জন্য পরিকল্পিত একটি মিশন দীর্ঘ ৯ মাস পর সফলভাবে সম্পন্ন হলো।
নাসার মহাকাশ অপারেশন মিশন ডিরেক্টরেটের ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো বলেন, "ক্রু-৯ কে বাড়িতে ফিরিয়ে আনাটা অসাধারণ একটি ঘটনা।" তিনি মহাকাশচারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্পেসএক্সকে নাসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন।
পৃথিবীতে ফিরতে নভোচারীদের ১৭ ঘণ্টা সময় লেগেছে। ওজনহীন পরিবেশে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে ফেরার পর তাদের স্ট্রেচারের সাহায্য নিতে হয়েছে, যা স্বাভাবিক ঘটনা। প্রথমে মেডিকেল টিম তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে, এরপর তারা পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হবেন।
দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার ফলে মানবদেহের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শূন্য মাধ্যাকর্ষণে অবস্থানের কারণে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ব্রিটেনের প্রথম মহাকাশচারী হেলেন শারম্যান বলেন, "সবচেয়ে বড় বিষয় হবে পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন। তারা বড়দিন, জন্মদিন এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারিয়েছিলেন। এখন তারা কিছুটা হলেও সেই সময় ফিরে পাবেন।"
২০২৪ সালের জুনে বুচ উইলমোর ও সুনীতা উইলিয়ামস বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানের প্রথম ক্রু পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে অংশ নেন। তবে ক্যাপসুলটি মহাকাশ স্টেশন থেকে যাত্রার সময় প্রযুক্তিগত ত্রুটির সম্মুখীন হয়। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে নভোচারীদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। পরে, সেপ্টেম্বরে স্টারলাইনার নিরাপদে খালি অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরে এলেও দুই নভোচারী মহাকাশেই রয়ে যান। অবশেষে, স্পেসএক্সের ক্রু-১০ মিশনের মাধ্যমে তাদের সফলভাবে ফিরিয়ে আনা হয়।
এ ঘটনায় রাজনৈতিক বিতর্কও তৈরি হয়। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর নাসাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। এমনকি স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কও দ্রুত অভিযান শুরুর পক্ষে ছিলেন। তবে কিছু মহল থেকে দাবি করা হয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সুনীতা ও বুচকে মহাকাশে ফেলে রেখেছিলেন। যদিও এ ধরনের দাবির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বিবিসি
সায়মা ইসলাম