
ছবি: সংগৃহীত।
ভারতের মোদি সরকারের আজ্ঞাবহ কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এবার তাদের প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের ভারত সফর। তার এই সফরকে ঘিরে ভারতীয় মিডিয়া আবারও বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা শুরু করেছে।
রবিবার মোদি অনুগত বলে পরিচিত এনডিটিভিতে তুলসী গ্যাবার্ডের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। সেখানে তাকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়।" তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা শুরু হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তুলসী গ্যাবার্ডের এই বক্তব্যকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় মিডিয়া নতুন করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে শুরু করেছে। মোদি সমর্থক বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশকে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য হলো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার নামে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
এদিকে, কিছুদিন আগেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সাবেক ফিল্ড কমান্ডার অমর ভূষণ দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশে বেশ কিছু গোপন অভিযান চালিয়েছে ‘র’। তিনি বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে জামায়াত ও জেএমবি অনুসারীদের টার্গেট করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছে।
ভারতীয় সেনাপ্রধানও সম্প্রতি বলেছেন, "প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসবাদের শিকড় থাকলে তা ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। সেই উদ্বেগ দূর করতে নিজেদের সক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।" এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের জন্য ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।
তুলসী গ্যাবার্ড দুই দিনের সফরে দিল্লিতে ভারতের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে সন্ত্রাসবাদই ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। বৈঠকে ভারত বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তোলে এবং জঙ্গিবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি সামনে আনার চেষ্টা করে।
ভারত চাইছে, হাসিনা সরকারের মতোই বাংলাদেশে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে এবং এর জন্য তারা আমেরিকার সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত মার্কিন সরকার বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতকে কোনো বিশেষ সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়নি। এমনকি মোদির আমেরিকা সফরের সময়ও মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কোনো কঠোর অবস্থান নেয়নি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এ বিষয়ে ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্ন এক কথায় উড়িয়ে দেন।
ভারতের এই প্রচারণা যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য পরিচালিত হচ্ছে, তা স্পষ্ট। বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত প্রমাণ করতে যে ভারতীয় মিডিয়া উঠেপড়ে লেগেছে, তা মূলত আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠারই একটি অংশ। তবে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সতর্ক দৃষ্টি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা এ ধরনের অপপ্রচারের জবাব দিতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।
নুসরাত