ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

ধর্মীয় সহিংসতায় উত্তপ্ত ভারতের নাগপুর, কারফিউ জারি

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ১৮ মার্চ ২০২৫

ধর্মীয় সহিংসতায় উত্তপ্ত ভারতের নাগপুর, কারফিউ জারি

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরে সোমবার (১৭ মার্চ) রাত থেকে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাথর নিক্ষেপ, দোকান ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করে এবং পরে কারফিউ জারি করা হয়।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, নাগপুরের মহাল এলাকায় সোমবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, যেখানে পুলিশের দিকেও ব্যাপক পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এতে ছয়জন বেসামরিক নাগরিক ও তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।

এরপর সংঘর্ষ কোতোয়ালি ও গণেশপেঠ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক হাজার মানুষ ব্যাপকভাবে পাথর নিক্ষেপ ও ভাঙচুর চালায় এবং দোকান ও গাড়িতে আগুন দেয়।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোর পর্যন্ত পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে আটক করে। পরে মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী যোগেশ কদম সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানান, এখন পর্যন্ত ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে, তবে সংঘর্ষের মূল কারণ এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল নাগাদ পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসলেও কারফিউ বহাল রয়েছে। সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থল মহাল অঞ্চল ছাড়া নাগপুরের অন্যত্র জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান।

পুলিশ নাগরিকদের অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না বের হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনাস্থল আরএসএস-এর প্রধান কার্যালয়ের কাছাকাছি এবং নাগপুরেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশের বাসভবন অবস্থিত।

সংঘর্ষের সূত্রপাত: সোমবার দুপুরে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল নাগপুরের মহাল এলাকায় বিক্ষোভের আয়োজন করে। বিক্ষোভে আওরঙ্গজেবের একটি ছবি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, বিক্ষোভ চলাকালে কোরআন শরিফ পোড়ানোর গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। পরে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পুলিশের কাছে দায়ের করা হয়।

নাগপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অর্চিত চন্দক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানান, একটি গুজবের ফলে সোমবারের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ভুল তথ্যের কারণেই এই সংঘর্ষ বাধে। তিনি নাগরিকদের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে, নাগপুরের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরি এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেলে লেখেন, কিছু গুজবের কারণে নাগপুরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নাগরিকদের শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান।

অন্যদিকে, এআইএমআইএম নেতা ও সাবেক বিধায়ক ওয়ারিস পাঠান সংঘর্ষের নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক এর প্রকৃত কারণ কী। তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে আওরঙ্গজেবের সমাধির বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে মানুষের দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ: সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, সোমবার রাতে চিটনিস পার্ক থেকে শুক্রাওয়ারি তালাও রোড পর্যন্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়। সেখানে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং আবাসিক ভবনের দিকে পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন জানান, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে একদল লোক হঠাৎ এলাকায় ঢুকে পড়ে এবং পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। চারটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, যার মধ্যে একটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।

হনসাপুরি এলাকাতেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এক দোকানি জানান, রাত সাড়ে দশটার দিকে তিনি দোকান বন্ধ করছিলেন, তখন একদল লোক গাড়িতে আগুন দেয়। তিনি পানি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

হনসাপুরির আরেক বাসিন্দা এএনআইকে জানান, হামলাকারীরা প্রথমেই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ভেঙে ফেলে। তিনি আরও বলেন, তারা মুখ ঢাকা অবস্থায় ধারালো অস্ত্র, লাঠি ও কাচের বোতল নিয়ে দোকান ও গাড়িতে হামলা চালায়।

এক প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগ, সহিংসতার খবর দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

সূত্র: https://youtu.be/06Lv93XnMa0?si=yYVlHQ4h1sGmPH3p

আসিফ

×