ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

নাগরিকত্ব আইন বিরোধীরা মানছে না, মোদি তবুও থামছে না

প্রকাশিত: ০২:০২, ১৮ মার্চ ২০২৫

নাগরিকত্ব আইন বিরোধীরা মানছে না, মোদি তবুও থামছে না

ছবি: সংগৃহীত

প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদি সরকার লোকসভায় পেশ করল অভিবাসন ও বিদেশী নাগরিক সংশোধনী বিল। কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই বিলটি সংসদে তোলা হয়েছে। এই বিল আইনে পরিণত হলে ভারতের শতাব্দী প্রাচীন অভিবাসন আইনও পরিবর্তন হবে।

মোদি সরকারের দাবি, এই আইন দেশের পুরনো আইনের সরলীকরণ, জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করা এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। তবে বিরোধীদের মতে, মূলত বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিমদের শনাক্ত ও আটক করাই এই আইনের প্রকৃত লক্ষ্য। বিশেষ করে, আসাম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির উদ্দেশ্য হিন্দু মেরুকরণকে ত্বরান্বিত করা।

কংগ্রেস সাংসদ মনীষ তিওয়ারি বিলটিকে ‘সর্বনাশা ও দমনমূলক’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই আইনের মাধ্যমে সরকার চায় বিদেশী নাগরিকদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে। তার মতে, অতীতে কৃষক আন্দোলনের সময় যেসব অনাবাসী ভারতীয় বা বিদেশী বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশকে ভারতে নামার আগেই ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তিনি বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর সুপারিশ করেছেন।

তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় বিলটির বিরোধিতা করে বলেন, এই কঠোর নিয়ম চালু হলে প্রতিভাবান বিদেশী যুবকদের ভারতে আসার আগ্রহ কমে যাবে, যা দেশের ক্ষতির কারণ হবে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, একাধিক পুরনো আইন একে অপরের সঙ্গে ওভারল্যাপ করছিল, যা নানা জটিলতা তৈরি করেছে। নতুন বিলে সেই জটিলতা দূর করার দাবি করেছে সরকার।

ব্রিটিশ আমলের পাসপোর্ট আইন ১৯২০, বিদেশী নাগরিক আইন ১৯৪৬ ও রেজিস্ট্রেশন অফ ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৯৩৯-সহ চারটি আইন একত্রিত করে নতুন আইন গঠন করতে চাইছে সরকার। বিলটি লোকসভায় পেশ করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায়।

বিল অনুযায়ী, বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া ভারতে প্রবেশ করলে ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানা ও পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ভুয়া নথি থাকলে জরিমানার পরিমাণ ১০ লাখ রুপি পর্যন্ত হতে পারে এবং সাজা দুই থেকে সাত বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে অভিবাসন কর্মকর্তাদের।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশীদের বায়োমেট্রিক তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে এবং ডাক্তারি পরীক্ষার বিরুদ্ধেও আপত্তি জানানো যাবে না। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি কোনো বিদেশী নাগরিককে সাহায্য করে, তবে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য সরকারকে জানাতে হবে। সরকার মনে করলে, কোনো বিদেশী নাগরিকের উপস্থিতি দেশের অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা বা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠলে তার প্রবেশ ও অবস্থান নিষিদ্ধ করা যাবে।

বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিলের মাধ্যমে বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করা সহজ হবে এবং বিজেপি আগামী বছর আসাম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয় মেরুকরণকে আরও তীব্র করতে চাইছে। যদিও বিরোধীরা বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেছে, তবু সরকার সেই দাবি মানেনি।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/Ze6hB3pRNGk?si=SV8ylO27_paM0Ws8

এম.কে.

×