ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরিকে ঘিরে উৎকণ্ঠা: তবে কী ইরান-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু!

প্রকাশিত: ০১:৩৬, ১৮ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০১:৩৭, ১৮ মার্চ ২০২৫

তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরিকে ঘিরে উৎকণ্ঠা: তবে কী ইরান-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু!

ছবি : জনকণ্ঠ

ইয়েমেনের পর এবার ইরানের সাথেও যুদ্ধের আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত কিছুদিন থেকেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে তেহরান ও হোয়াইট হাউসের মাঝে। বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো মসনদে বসলে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দুই দেশের মাঝে মধ্যস্থতা করতে নাক গলিয়েছে রাশিয়াও। তবে, শেষ মুহূর্তে পাল্লা ভারী ইরানেরই।

এদিকে তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরিকে ঘিরে উৎকণ্ঠায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ। যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের শাসনভার নিয়ে চিন্তার ভাঁজ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কপালে। ইরান সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে কোন অবস্থানে মার্কিন প্রশাসন!

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে ব্যক্তি বা দলই বসুক না কেন, ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে হোয়াইট হাউস। বিদায় বেলায় এমন সতর্কবার্তাই দিয়ে গেছেন মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার পর থেকেই ইরানের সাথে নিষেধাজ্ঞার খেলায় মত্ত হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে, মার্কিন প্রশাসনের সমর্থন নিয়ে ইরান অধ্যায় শেষ করার ঘোষণাও দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আর আগামী অক্টোবরের মধ্যেই পারমাণবিক ইস্যুতে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমঝোতায় না গেলে নেতানিয়াহুর সহায়তায় ট্রাম্প তেহরানে হামলা চালাবেন বলে হুশিয়ার করে ইউরোপের একজন কূটনীতিক।

ইরানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কথা লড়াই আর পত্রযুদ্ধে সীমাবদ্ধ রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার বন্ধু নেতানিয়াহু। তবে, দেশটিকে মোকাবিলায় আঙ্গুল বাঁকা করেছেন ট্রাম্প। ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডকে দায়িত্ব দিয়েছেন মার্কিন শাসক। এরই মধ্যে রাজধানী সানাসহ বেশ কিছু শহরে মার্কিন সামরিক বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছে। হতাহতের সারি বড় হয়েই চলেছে বলে ১৭ মার্চ এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এটি সবচেয়ে বড় হামলা বলে দাবি করছে রয়টার্স।

এদিকে ইয়েমেনে হামলার ঠিক আগ মুহূর্তে হুথি বিদ্রোহী ও ইরানকে লক্ষ্য করে ট্রাম্প বলেন, সমস্ত হুথি সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে বলছি, তোমাদের সময় শেষ। আজ থেকেই তোমরা হামলা বন্ধ করো, অন্যথায় তোমাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেব, যা আগে কখনো দেখোনি। আর ইরানকে সতর্ক করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন বন্ধ করো। যুক্তরাষ্ট্রকে যদি কোন ধরনের হুমকি দাও, তাহলে আমরাও তোমাদের কঠোরভাবে দমন করব। এতে তোমরা ভালো থাকবে না।

চুপ করে নেই আয়াতুল্লাহ আলী খামিনের নেতৃত্বাধীন ইরানও। দেশটির সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা বাহিনী আইআরজিসির প্রধান মেজর জেনারেল হোসেন সালামী ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছেন, শত্রুপক্ষের যেকোনো হামলাকে আমরা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করব। যুক্তরাষ্ট্র হুমকির মাধ্যমে আমাদের সাথে সরাসরি সমঝোতা করতে চায়। আমরা তাদের বিশ্বাস করি না। তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না। ইরানি জাতি শত্রুদের ভালোভাবেই চেনে।

এদিকে পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কাজ করা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ এর প্রধান রাফায়েল গ্রসি ১৫ মার্চ জানিয়েছেন, পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে ইরান। দেশটি বোমা তৈরি করতে প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করে ফেলেছে। তবে ইরানকে কোনভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়ার্ল্ড বলেন, তেহরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সেজন্য প্রস্তুত আছে মার্কিন প্রশাসন।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এবিসি নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে মাইকেল ওয়ার্ল্ডস এমন মন্তব্য করেন বলে ১৭ মার্চ এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে লন্ডন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল।

যুক্তরাষ্ট্র যে শুধু ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমকেই বন্ধ করতে চায় বিষয়টি ঠিক সেটা নয়। তাদের চোখ তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে ঘিরেও। ইরানের সাথে যুদ্ধের আভাস দিয়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, আমরা তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কার্যক্রমের জন্য ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে চাই। তারা আমাদের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করলে কোন সংঘাত হবে না। তবে ইরান যদি আমাদের কথা না শোনে, তাহলে এর পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে। আমরা এমন এক পৃথিবী দেখতে চাই না, যেখানে আয়াতুল্লাহরা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছেন। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের যেকোনো ভাবে প্রতিরোধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বার্তা সংস্থার রয়েটার্সকে জানান, ইরানের সাথে দুইভাবে সমঝোতায় আসতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক অভিযান পরিচালনা করে অথবা চুক্তির মাধ্যমে। তবে তিনি চুক্তির বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়েছেন।

অন্যদিকে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল বুসাইদীর সাথে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে দেশটির রাজধানী মাঝকাটে গেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। তার সফরের ঠিক আগ মুহূর্তেই ইয়েমেনে হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত মার্কিন প্রশাসনের সাথে পারমাণবিক ইস্যুটি নিয়ে পরোক্ষভাবে আলোচনা করতেই ওমান সফরে গেছেন আরাকচি, এমন ধারণা সংবাদ মাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালের।

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের দমনের মাধ্যমে ইরানকে যে কঠোর বার্তা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এমন মন্তব্য করে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেক্সে বলেন, হুথিদের বিরুদ্ধে চলমান মার্কিন বিমান হামলা ইরানের প্রতি এই গোষ্ঠীকে সমর্থন বন্ধ করার জন্য একটি সতর্কবার্তা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতিবিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন বন্ধ করতে ইরানকে চিঠির মাধ্যমে প্রস্তাব দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

কিন্তু কোন রাজনৈতিক ফায়দার মাধ্যমে হোয়াইট হাউজের সাথে সমঝোতায় যাবে না তেহরান, এমন বার্তাই দিয়েছেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী।

মো. মহিউদ্দিন

×