ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

সবকিছুই শেষ! কুরস্ক থেকে পিছু হাঁটছে ইউক্রেনীয় বাহিনী

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ১৭ মার্চ ২০২৫

সবকিছুই শেষ! কুরস্ক থেকে পিছু হাঁটছে ইউক্রেনীয় বাহিনী

 

কিয়েভ, ইউক্রেন – ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর সুদজাহ থেকে পশ্চাদপসরণ করেছে, যা ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান সংঘর্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। টানা কয়েক মাসের তীব্র লড়াই ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আক্রমণের ফলে ইউক্রেনের প্রধান সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যার কারণে বাহিনীকে ঘেরাও এড়াতে শহরটি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়।

 

কুরস্ক থেকে পশ্চাদপসরণ ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য একটি কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল, কারণ রাশিয়ার অব্যাহত হামলার মুখে প্রতিরক্ষা ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছিল। এই পশ্চাদপসরণের ফলে ইউক্রেন বেশ কয়েকটি উচ্চমূল্যের পশ্চিমা সরবরাহকৃত অস্ত্র পরিত্যাগ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে দশটি এম১ আব্রামস ট্যাংক এবং অন্তত আশিটি এম২ ব্র্যাডলি পদাতিক যুদ্ধযান। এই ক্ষয়ক্ষতি ইউক্রেনের সামরিক শক্তির জন্য একটি বড় আঘাত এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতিফলন।

যদিও এটি একটি সামরিক ধাক্কা, ইউক্রেনীয় সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন যে এটি বাহিনী রক্ষা ও পুনর্গঠনের জন্য একটি প্রয়োজনীয় কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল। এক সামরিক সূত্র জানিয়েছে, "আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতাকে স্বীকার করতে হবে। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো বাহিনীকে সংগঠিত করা এবং পরবর্তী প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করা।"

 

পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মেজর জেনারেল আন্দ্রি হ্নাতভকে নতুন চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে নিয়োগ করেছেন, যিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আনাতোলি বারহিলেভিচের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। এই পরিবর্তন ইউক্রেনের কৌশলগত অভিযোজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হামলার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "এটি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নতুন নেতৃত্ব এবং কৌশল প্রয়োজন, যাতে আমরা বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করতে পারি।"

 

ইউক্রেনের পশ্চাদপসরণের পর, রাশিয়ার বাহিনী তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং কুরস্ক ও আশপাশের অঞ্চলে আরও গভীরে অগ্রসর হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, রাশিয়ার আরও অগ্রগতি হলে এটি ইউক্রেনের সাপ্লাই লাইনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, যা কিয়েভের প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টাকে আরও দুর্বল করে তুলবে।

রাশিয়ার কর্মকর্তারা এই সামরিক সাফল্যকে যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখছেন, তবে ইউক্রেন এখনো তাদের প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন এখন প্রতিরক্ষামূলক কৌশলে মনোযোগ দেবে, যাতে প্রধান শহরগুলো শক্তিশালী করা যায় এবং সময়মতো পাল্টা আক্রমণের সুযোগ নেওয়া যায়।

 

যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তবে পুতিন এই অস্ত্রবিরতির বিষয়ে এখনো দ্বিধাগ্রস্ত, যা কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনাকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল, উভয় পক্ষই নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে সংঘর্ষে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এই ঘটনাবলির দিকে সতর্ক নজর রাখছে এবং এর ভূরাজনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন করছে।

সাজিদ

×