ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

নারীদের রাখতেন যৌনদাসী করে, বিপাকে স্বঘোষিত নারীবিদ্বেষী

প্রকাশিত: ১৫:৩৩, ১৭ মার্চ ২০২৫

নারীদের রাখতেন যৌনদাসী করে, বিপাকে স্বঘোষিত নারীবিদ্বেষী

গত ৯ মার্চ রোমানিয়া থেকে ফ্লরিডায় পৌঁছেছেন স্বঘোষিত নারীবিদ্বেষী অ্যান্ড্রু টেট এবং তাঁর ভাই ট্রিস্টান। আমেরিকার সেই প্রদেশে তাঁদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে ফ্লরিডা জুড়ে। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তও শুরু করেছে প্রশাসন।

অনেক আগেই নারীবিদ্বেষী হিসাবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন নেটপ্রভাবী অ্যান্ড্রু। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আধিপত্য বিস্তারের স্বপক্ষে কথা বলে এবং যৌনতাবাদী বিষয়বস্তু তৈরি করে বহু অনুরাগী তৈরি করেছেন তিনি।

২০২২ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন অ্যান্ড্রু। তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের গোষ্ঠী গঠন এবং মানবপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল। একই সঙ্গে তাঁর এবং তাঁর ভাই ট্রিস্টানের রোমানিয়া ছেড়ে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল।

ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দুই ভাইয়ের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে একটি ব্যক্তিগত বিমানে রোমানিয়া ত্যাগ করেন তাঁরা। আমেরিকা এবং ব্রিটেন— দু’দেশেরই নাগরিকত্ব রয়েছে অ্যান্ড্রু এবং ট্রিস্টানের কাছে। তবে ফ্লরিডা পৌঁছে নতুন করে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা।

তবে ট্রিস্টান যতটা না কুখ্যাত, তাঁর দাদা অ্যান্ড্রু তার থেকে অনেক বেশি কুখ্যাত। কিন্তু কেন? অ্যান্ড্রু ছিলেন পেশাদার ক্রীড়াবিদ। সেখান থেকে তিনি স্বঘোষিত নারীবিদ্বেষী গুরু হন। একই সঙ্গে তিনি অগাধ সম্পত্তির মালিক।

রোমানিয়ার ধনকুবের অ্যান্ড্রুকে নিয়ে বিতর্ক ছিল বহু দিন ধরেই। প্রকাশ্যে বার বার কটু কথা বলেও কী ভাবে পার পেয়ে যান তিনি, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল অনেকের মনেই। তবে তার উত্তর বহু দিন অধরাই ছিল।

রীতিমতো ওয়েবসাইট খুলে নারীদের যৌনাচারের ভিডিয়ো প্রচার করতেন অ্যান্ড্রু ও তাঁর ভাই ট্রিস্টান। সঙ্গে চলত নিজেদের নারীবিদ্বেষী এবং পুরুষতান্ত্রিক মতবাদের প্রচার। ‘হাসলার ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি ওয়েবসাইট থেকে সেই মত প্রচার করতেন দুই ভাই। অভিযোগ, এ সবের আড়ালে চলত নারী পাচারও। এ ভাবেই অন্তত ৮০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন অ্যান্ড্রু।

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পুলিশের কাছে এক মহিলা অভিযোগ করেন, অ্যান্ড্রু দিনের পর দিন তাঁকে আটকে রেখে যৌন হেনস্থা করেছেন। বলপূর্বক তুলেছেন যৌনাচারের ভিডিয়োও। তার পরই তদন্ত শুরু করে রোমানিয়া প্রশাসন।

প্রাথমিক তদন্তের পর রোমানিয়া প্রশাসনের অভিযোগ ছিল, অন্তত ৬ জন মহিলাকে আটকে রেখেছিলেন অ্যান্ড্রু এবং তাঁর সঙ্গীরা। প্রাথমিক তদন্তের পর রোমানিয়া প্রশাসন জানিয়েছিল, এর আগে ২০১৫ সালেও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল টেটের বিরুদ্ধে। সে সময় ব্রিটেনে ছিলেন তিনি। অভিযোগ থেকে বাঁচতে তিনি পালিয়ে রোমানিয়া চলে যান।

৬ জন অভিযোগকারিণী প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন, প্রেমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফাঁসানো হয়েছিল তাঁদের। প্রথমে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে তার পর শুরু হয় যৌন উৎপীড়ন। এর পর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হত বুখারেস্টের একটি অট্টালিকায়। সেখানেই জোর করে তাঁদের পর্ন ছবিতে নামতে বাধ্য করা হত বলে অভিযোগ।

জনপ্রিয় হওয়ার সময় থেকে অ্যান্ড্রু সমাজমাধ্যমে নিজের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি এবং ভিডিয়ো প্রকাশ করতেন নিয়মিত। চুরুট হাতে বিলাসবহুল গাড়িতে চেপে ছবিও দিতেন। সমাজমাধ্যমে অ্যান্ড্রু এক সময় দাবি করেছিলেন, ফেরারি, বুগাত্তি-সহ তাঁর ৩৩টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। ২০২২ সালে তাঁর ১০টির বেশি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ।

প্রভাবী হওয়ার আগে পেশাদার কিকবক্সার ছিলেন অ্যান্ড্রু। ২০০৫ সালে ‘কিং কোবরা’ নামে ওই খেলায় বেশ নাম করেন। লাইট হেভিওয়েট বিভাগে দু’টি বিশ্বখেতাবও জিতেছেন তিনি। পরে এমএমএ-তেও নামেন তিনি। গ্রেফতার হওয়ার আগেও রোমানিয়ার একটি এমএমএ সংস্থার হয়ে ধারাভাষ্য দিতেন তিনি।

কিন্তু ২০১৬ সালের আগে পর্যন্ত রিংয়ের বাইরে অ্যান্ড্রুর পরিচিতি বিশেষ ছিল না। ব্রিটেনে ‘বিগ বস’-এর ধাঁচে একটি রিয়্যালিটি শো হয়। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন টেট। কিন্তু সেখানে সমকাম-বিরোধী এবং বর্ণবৈষম্যমূলক কথা বলার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এক মহিলাকে বেল্ট দিয়ে আঘাত করার ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আসে। তার পরই অনুষ্ঠান থেকে ছেঁটে ফেলা হয় তাঁকে।

অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়লেও নিজের ওই আচরণকে মূলধন করে নেটমাধ্যমে আত্মপ্রচার শুরু করেন অ্যান্ড্রু। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে অনুরাগীর সংখ্যা। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে প্রায় ৫০ লক্ষ অনুরাগী তৈরি হয়েছিল তাঁর।

খেলার সূত্রেই অ্যান্ড্রু নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। নিজের সুঠাম শরীর নিয়েও গর্বের শেষ ছিল না তাঁর। খালি গায়ে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক কিংবা টুইটারে ছবি দিতেন তিনি। সেই সব ছবিতে হাজারে হাজারে লাইক পড়ত।

শুধু ধনসম্পদ কিংবা শরীর নয়, নিজেকে পুরুষতান্ত্রিকতার গুরু হিসাবে নেটমাধ্যমে প্রচার করাও শুরু করেছিলেন টেট। বিভিন্ন নারীবিদ্বেষী ভিডিয়ো প্রচার করতে শুরু করেন তিনি। নিজেকে প্রকাশ্যেই নারীবিদ্বেষী বলেও ঘোষণা করেন টেট। নিজের ‘মতবাদ’ যাতে আরও ছড়িয়ে পড়ে, তাই কী ভাবে ‘দাদাগিরি’ করতে হবে তার পাঠও দিতে শুরু করেন নেটমাধ্যমে।

সূত্র: আনন্দবাজার

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ফুয়াদ

×