ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

এই ভারতীয় বস্তিতে এমন কিছু গোপন রহস্য রয়েছে যা কেউ জানাতে চায় না!

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ১৬ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২১:৪১, ১৬ মার্চ ২০২৫

এই ভারতীয় বস্তিতে এমন কিছু গোপন রহস্য রয়েছে যা কেউ জানাতে চায় না!

ছবি: সংগৃহীত।

ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরগুলোর আশেপাশে প্রায়ই বস্তি বা অস্বাস্থ্যকর বসবাসের ক্ষেত্রের কথা শোনা যায়। তবে, এক্ষেত্রে একটি বিশেষ বস্তি বিশ্বের দৃষ্টিতে বেশ আলোচিত, এবং তা হলো ধারাভি—বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বস্তি। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকা এতটাই বড় যে, এটি কিছু দেশের মোট জনসংখ্যার সমান! ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে অবস্থিত এই বস্তির জনসংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষের বেশি। এটি শুধু ভারতের নয়, বরং বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম এবং সবচেয়ে পরিচিত বস্তি।

ধারাভির এই বিশালতা ও জনসংখ্যার ঘনত্ব যে কোনও জায়গার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এতে বসবাসকারী মানুষদের অবস্থা কী? তাদের দৈনন্দিন জীবন কেমন? এই বিশেষ বস্তি সম্পর্কে জানলেই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করা সহজ হবে।

জীবনযাত্রা:
ধারাভি, যা মুম্বাই শহরের মধ্যেই অবস্থিত, তাতে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। ছোট ছোট কাঁচা ঘর, একসাথে জমে থাকা বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবন এ জায়গাটিকে অন্যরকম এক বাস্তবতায় পরিণত করেছে। এখানকার বাসিন্দারা প্রায়শই রান্না, খাওয়া, ও শৌচকর্মের জন্য একে অপরের সঙ্গে বিভক্ত ছোট জায়গায় জীবন কাটান। তবে এই অভাবনীয় ঘনত্ব সত্ত্বেও তাদের মধ্যে দৃঢ় সম্প্রদায়বদ্ধতা এবং একে অপরের সহায়তার একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি রয়েছে।

অর্থনীতি এবং কাজ:
ধারাভির বাসিন্দারা অনেক সময় নির্মাণ কাজ, কাপড় তৈরির কারখানা, হস্তশিল্প এবং ছোটখাটো ব্যবসায় যুক্ত থাকেন। বস্তির মধ্যে নানা ধরনের শিল্পের উন্নতি ঘটেছে—বিশেষ করে ছোট কাচের পাত্র, চামড়াজাত পণ্য, কাপড় এবং প্লাস্টিকের জিনিস তৈরি করার কারখানা এখানে রয়েছে। এখানে প্রায় ৫০০০-এরও বেশি ছোট ব্যবসা রয়েছে, যা বস্তির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা:
ধারাভিতে স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। এখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা অত্যন্ত প্রচলিত। তবে কিছু এনজিও এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে। শিক্ষা ব্যবস্থাও সীমিত—যদিও অনেক সচ্ছল মানুষ তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠায়, তথাপি অধিকাংশ মানুষই প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সংগ্রাম করেন।

বস্তির চিত্র এবং সংস্কৃতি:
ধারাভি শুধু বিপদ এবং দারিদ্র্যের প্রতীক নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতির মিলনস্থলও বটে। এখানে নানা ধর্ম, ভাষা এবং জাতির মানুষ বসবাস করেন, যা স্থানীয় সমাজে একটি বৈচিত্র্যময়তা সৃষ্টি করে। তবে, মুম্বাইয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে আসা মানুষের জীবনে সীমাবদ্ধতা থাকলেও তাদের মনোবল এবং ইচ্ছাশক্তি তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একে অপরকে সহায়তা করে।

ধারাভি এবং ভবিষ্যৎ:
এটি এত বিশাল একটি জনবসতি হওয়া সত্ত্বেও, উন্নতির পথে পদক্ষেপ নিয়ে সেখানকার অবস্থা বদলানোর জন্য নানা প্রচেষ্টা চলছে। তবে, জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি যেমন করোনা মহামারী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সব সময়ই এই উন্নয়ন প্রচেষ্টাগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।

শেষকথা, ধারাভির বাস্তবতা একদিকে যেখানে দারিদ্র্য এবং অশান্তি দেখা যায়, সেখানে অন্যদিকে এটি এক ধরনের মানবিক দৃঢ়তা, সহানুভূতি এবং সম্প্রদায়ের শক্তির প্রতীকও। এখানকার মানুষ, যারা বিশ্বের একেবারে নীচু স্তরের জীবনযাপন করছে, তাদের সংগ্রাম এবং আশা, এটি আমাদের শেখায় যে, মনের শক্তি ও একতাবদ্ধতা সত্ত্বেও সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও জীবন চলতে পারে।

নুসরাত

×