
ছবি: সংগৃহীত।
পানামা খালকে চীনা প্রভাবমুক্ত করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল নির্দেশিকার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, পেন্টাগনকে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প বলেছিলেন, ১৯৯৯ সালে পানামা চুক্তিটি ভুলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পানামা খাল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া সব পথ খোলা থাকবে।
ট্রাম্প অভিযোগ করেন, পানামা খাল বর্তমানে চীনা প্রভাবাধীন। তবে তিনি এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। পানামা খালটি একটি কৃত্রিম জলপথ, যা আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করে। প্রথমে ফ্রান্স খালটি খননের দায়িত্ব নিলেও ব্যর্থ হয়। এরপর ১৯০৪ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এটি নির্মাণ করে এবং দীর্ঘদিন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে।
তীব্র আন্দোলনের পর, ১৯৭৯ সালে "টরিজ-কার্টার চুক্তি"র মাধ্যমে পানামা সরকারের কাছে খাল হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয় এবং ১৯৯৯ সাল থেকে এটি পানামার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পানামা সরকার জানিয়েছে, খালটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, বরং সব রাষ্ট্র এর সুবিধা নিতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, পানামা ও পানামা খালকে চীনা প্রভাবমুক্ত করে সেখানে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে। এজন্য দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় অংশ ইতোমধ্যে পানামার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে।
প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ পাত্তা দেয়নি পানামা। দেশটির প্রেসিডেন্ট জোসেফ রাউল মুলিনো বলেন, "পানামা খালের একমাত্র উত্তরাধিকারী পানামাবাসী। এখানে চীনের কোনো প্রভাব নেই।"
তবে, গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে ট্রাম্প তার অবস্থান কঠোরভাবে জানালে, পানামা আপস করতে বাধ্য হয় এবং চীনের সঙ্গে ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত "বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ" চুক্তির নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, চীন পানামা খালকে সামরিকভাবে ব্যবহার করতে চায় এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে চীন এই অভিযোগ নাকচ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পানামার ওপর জোরপূর্বক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ এনেছে।
বর্তমানে পানামাতে যুক্তরাষ্ট্রের ২০০-রও বেশি সেনা অবস্থান করছে। বিশ্লেষকদের মতে, পানামা খাল পুনর্দখল ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিকভাবে নিজেদের শক্তিমত্তা আরও সুসংহত করতে চাইছে।
নুসরাত