ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

সিরিয়ায় ক্ষমতা দখলের লড়াই: তুরস্ক ও ইসরাইলের উত্তেজনা বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০০:৫০, ১৬ মার্চ ২০২৫

সিরিয়ায় ক্ষমতা দখলের লড়াই: তুরস্ক ও ইসরাইলের উত্তেজনা বৃদ্ধি

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসন পতনের পর দেশটির ভবিষ্যৎ ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। আঙ্কারা ও তেলআবিবের এই বিরোধ দীর্ঘদিনের, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনায় প্রকাশ পেয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বহু বছর ধরে ইসরাইলের নীতির কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। ২০০৯ সালে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ইসরাইলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেসের সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলের হামলার পর এরদোয়ান আবারও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন এবং এটিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেন।

সিরিয়ায় তুরস্ক ও ইসরাইলের স্বার্থ ভিন্ন। তুরস্ক চায় সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ক্ষমতায় থাকুক এবং দেশটি একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকুক। কুর্দিদের প্রভাব ঠেকানোও তুরস্কের অন্যতম লক্ষ্য, কারণ আঙ্কারা কুর্দি সংগঠন ওয়াইপিজি ও পিওয়াইডিকে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) অংশ হিসেবে দেখে। অন্যদিকে, ইসরাইল চায় সিরিয়ার ক্ষমতা দুর্বল থাকুক এবং দেশটির ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকুক। ইসরাইলি সেনারা আসাদ পতনের পর সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে এবং কিছু অংশ দখল করেছে।

সম্প্রতি সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট তুরস্ক সফরে এসে এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। তুরস্ক চায় সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়ে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে পুনরুদ্ধার করুক। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিরিয়ার অস্থিতিশীলতা তুরস্কেও প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ দেশটির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে শরণার্থী সংকট এবং নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হতে পারে।

ইসরাইলের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, সিরিয়ায় তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধি ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। ইসরাইলি থিংক ট্যাংক ‘আলমা রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন সেন্টার’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তি ইসরাইলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এছাড়া, সুন্নি বিদ্রোহীদের সমর্থন করলে ইরান সমর্থিত শক্তির চেয়েও বড় হুমকি তৈরি হতে পারে।

তুরস্ক-ইসরাইল উত্তেজনা সরাসরি সংঘাতে রূপ নেবে কিনা তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতবিরোধ রয়েছে। ওয়াশিংটন উভয় দেশেই প্রভাবশালী, যা সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা কমিয়ে আনে। তবে ইসরাইলের প্রক্সি বা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে, তুরস্কের স্বার্থ রক্ষা এবং শরণার্থী ইস্যু মোকাবিলায় সিরিয়ার স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ ক্ষমতা কাঠামো কেমন হবে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।

 

রাজু

×