
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছে সাম্প্রতিক কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন। ফ্রান্স ২৪-এর এক বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, ৪০ বছর আগে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি ট্রাম্পকে নিয়োগ দিয়েছিল।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে মার্কিন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য এজেন্ট খুঁজছিল কেজিবি। তখনই তরুণ ট্রাম্পের নাম তালিকাভুক্ত হয়। প্রাক্তন কেজিবি কর্মকর্তা ইউরি শিভেটাসের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৭ সালে চেক মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে বিয়ে করার পর ট্রাম্প চেকোস্লোভাকিয়া ও কেজিবির গোয়েন্দা নজরদারিতে আসেন। তিন বছর পর, নিউইয়র্কে ট্রাম্পের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেল উদ্বোধনের সময় রুশ ব্যবসায়ী সেমিওন কিসলিন তাকে ২০০টি টেলিভিশন সেট উপহার দেন। কিসলিন দীর্ঘদিন কেজিবির স্পটার এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, মার্কিন সিনেটের গোয়েন্দা কমিটির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে বিজয়ী করতে রাশিয়া সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রতি ঝোঁক নিয়ে পলিটিকো বলছে, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তিনি অন্তত ২৯ বার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ঘিরেও বিতর্ক ছড়িয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার আড়ালে তিনি কিয়েভের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওয়াশিংটন যে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা দিয়েছে, তার বিনিময়ে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ৫০ শতাংশ দাবি করেছেন ট্রাম্প। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এটি মেনে নিলে তার দেশের অন্তত ১০ প্রজন্ম এর খেসারত দিতে হবে।
এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে নতুন উত্তেজনা শুরু হয়। ট্রাম্প তাকে ‘একনায়ক’ আখ্যা দিয়ে হোয়াইট হাউসে ডেকে অপমান করেন এবং বৈঠক অসমাপ্ত রেখেই তাকে বের করে দেন।
দ্য টেলিগ্রাফ-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেনকে অর্থনৈতিক উপনিবেশে পরিণত করার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিতে ‘মাফিয়া স্টাইল’ কৌশল নিচ্ছেন তিনি।
বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত?
ট্রাম্পের এই আগ্রাসী নীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি নতুন উপনিবেশবাদ কায়েমের চেষ্টা করছেন। একদিকে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ দখলের চেষ্টা, অন্যদিকে গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ এসবেরই প্রমাণ।
এছাড়া, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে হোটেল ও রিসোর্টে পরিণত করার পরিকল্পনা এবং গালফ অফ মেক্সিকোর নাম বদলে ‘গালফ অফ আমেরিকা’ রাখার উদ্যোগকেও ট্রাম্পের উপনিবেশবাদী মানসিকতার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে তার ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যপদ ছেড়েছেন, এমনকি জাতিসংঘ ও ন্যাটো থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তার উপদেষ্টা ইলন মাস্ক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আন্তর্জাতিক জোটগুলো থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে বিশ্ব নেতৃত্বের শূন্যস্থান পূরণে চীন বা ভারত এগিয়ে আসতে পারে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক আধিপত্য হারাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/ifRKQ0B7Tf0?si=WfaYYu9C6NtYV9oJ
এম.কে.