
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের মরু শহর মিঠিতে গড়ে উঠল অসাধারণ ধর্মীয় সম্প্রীতির এক নজির, যেখানে রমজানে রোজাদার মুসলিমদের জন্য খাবার প্রস্তুত করলেন হিন্দুরা, আর মুসলিম সম্প্রদায় উষ্ণ আন্তরিকতায় স্বাগত জানাল হলির শোভাযাত্রাকে। ধর্মীয় বৈষম্যে ক্ষতবিক্ষত এক দেশে এই বিরল সৌহার্দ্যের দৃষ্টান্ত সত্যিই প্রশংসনীয়।
প্রায় ৬০,০০০ মানুষের এই শহর পাকিস্তানের অন্যতম ব্যতিক্রম, যেখানে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে দুই সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ও আচার-অনুষ্ঠান একসঙ্গে উদযাপন করা হয়। মিঠির ব্যবসায়ী রাজ কুমার বলেন, "হলির দিনে হিন্দু তরুণরা মুসলিম তরুণদের সঙ্গে একসঙ্গে রং খেলায় মেতে ওঠে, যা এই সম্প্রীতির অন্যতম উদাহরণ।"
এই বছর হলি ও রমজান একসঙ্গে পড়ায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। শহরের রঙিন শোভাযাত্রায় শত শত হিন্দু অংশ নেন, আর মুসলিম প্রতিবেশীরা তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। মিঠির হিন্দু বাসিন্দা মোহনলাল মালি বলেন, “শৈশব থেকেই আমরা একসঙ্গে বাস করছি, আর আমাদের পরম্পরা আমরা আজও মেনে চলছি।" তিনি রোজাদার মুসলিমদের ইফতারের জন্য খাবার ব্যবস্থাও করেন।
মুসলিম ধর্মীয় নেতা বাবু আসলাম কাইমখানি, হিন্দু এমপি মহেশ কুমার মালানিকে হলির আবির মাখিয়ে বলেন, "আজ হয়তো আমার গায়ে খুব বেশি রং নেই, কিন্তু আগে আমাকে একেবারে রঙে ভিজিয়ে দেওয়া হতো।"
এই সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবি দেখা যায় স্থানীয় ইমামের প্রার্থনায়ও, যেখানে তিনি দোয়া শেষ করেন এই বলে — "হিন্দু-মুসলমানদের জন্য শান্তি।" পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলের বিপরীতে মিঠিতে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় না। এমনকি, শহরে হিন্দু ধর্মের প্রতি সম্মান জানিয়ে গরুর মাংসের দোকানও নেই।
তবে, এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বহিরাগত প্রভাব ও উগ্রপন্থীদের কারণে কিছুটা হুমকির মুখে। তবুও মিঠির মানুষ তাদের আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক বিরল ও অনুকরণীয় উদাহরণ।
তথ্যসূত্র: https://timesofindia.indiatimes.com/world/pakistan/peace-to-hindus-and-muslims-this-pakistani-town-celebrates-holi-and-ramzan-together-in-rare-display-of-communal-harmony/articleshow/119010426.cms
আবীর