ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

গাজায় গণহত্যার দায়ে ইসরাইলি পুরস্কার প্রত্যাখান পাকিস্তানি স্থাপত্য শিল্পীর

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২১:৪২, ১৩ মার্চ ২০২৫

গাজায় গণহত্যার দায়ে ইসরাইলি পুরস্কার প্রত্যাখান পাকিস্তানি স্থাপত্য শিল্পীর

ছবি : সংগৃহীত

গাজায় চলমান নৃশংসতার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পাকিস্তানি স্থপতি ও সংরক্ষণবিদ ইয়াসমিন লারি এ বছরের উলফ পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডন এই তথ্য জানিয়েছে।

১৯৭৮ সালে ইসরায়েলে প্রবর্তিত উলফ পুরস্কার প্রতিবছর বিজ্ঞানী ও শিল্পীদের অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয়। এর লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন জাতির মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। তবে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইয়াসমিন লারি এই পুরস্কার গ্রহণ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

ডন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়াসমিন লারি বলেন, “আমাকে এটা করতেই হতো। আমার কোনো বিকল্প ছিল না। আমাকে করতেই হতো। নাহলে আমরা আর কী করতে পারি? আমাদের হাত বাঁধা। আমরা এখানে বসে আছি… ওদের (মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের) থেকে অনেক, অনেক দূরে। তাই আমি মনে করি, একজনকে অবশ্যই জানাতে হবে তার অবস্থান কোথায়।”

‘স্থাপত্য ক্ষেত্রে অনন্য অবদান’

ইয়াসমিন লারি পাকিস্তানের নিবন্ধিত প্রথম নারী স্থপতি। স্থাপত্য ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। অসাধারণ সব ডিজাইনের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে তার নিরলস প্রচেষ্টার জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত।

ইয়াসমিন লারি বলেন, “আমি গরিবদের জন্য কাজ করি।” তিনি কয়েক বছর আগে সিন্ধুর বন্যাকবলিত মানুষের জন্য হাজারো স্বল্প খরচের এক কক্ষবিশিষ্ট ঘর নির্মাণে সহায়তা করেছিলেন, যা দুর্যোগ মোকাবিলায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’

স্থাপত্য ও মানবকল্যাণে তার অসাধারণ অবদানের জন্য ইয়াসমিন লারি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালের রয়্যাল গোল্ড মেডেল ফর আর্কিটেকচার, যা ব্রিটেনের রাজা রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টসের সুপারিশে প্রদান করা হয়। এছাড়া তিনি ২০২০ সালে জেন ড্রু পুরস্কার জয় করেছেন।

‘ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভূমিকা’

ইয়াসমিন লারি করাচির ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৬ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা বই 'দ্য ডুয়াল সিটি: করাচি ডিউরিং দ্য রাজ'। বইটিতে করাচির ঔপনিবেশিক ইতিহাস, স্থাপত্য ও মানুষ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

ইয়াসমিন লারি করাচির ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রথমদিকের উদ্যোগী সংরক্ষণবিদদের অন্যতম ছিলেন। তিনি সমুদ্রতীরবর্তী এই শহরের ঐতিহাসিক গুরুত্বের প্রতি ইতিহাসপ্রেমী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

‘পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্তে প্রশংসা’

গাজায় চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে উলফ পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্তে ইয়াসমিন লারির সাহসী অবস্থান প্রশংসিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোই আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি মনে করি, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি সঠিক কাজ করেছি।”

মো. মহিউদ্দিন

×