ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

তবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আশাবাদী ওয়াশিংটন

স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা কম রাশিয়ার

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:২০, ১৩ মার্চ ২০২৫

স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা কম রাশিয়ার

রুশ-ইউক্রেন লড়াই বন্ধে এক মাসের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইউক্রেন

রুশ-ইউক্রেন লড়াই বন্ধে এক মাসের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইউক্রেন। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেনি রাশিয়া। মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে এক দীর্ঘ বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হ্যাঁ সূচক মন্তব্য করে। আলোচনায় অংশ নেওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার গণমাধ্যমের সামনে বলেন, বল এখন রাশিয়ার কোর্টে।
রুশ-ইউক্রেন লড়াই বন্ধে এখন মস্কোকে সদিচ্ছা দেখাতে হবে। তিনি বলেন, রাশিয়া যদি এখন হ্যাঁ সূচক মন্তব্য করে। তবে রুশ-ইউক্রেন লড়াই বন্ধে আর কোনো বাধা রইল না। তিনি বলেন, আর রাশিয়া যদি ‘না’ সূচক মন্তব্য করে তবে আমাদের তবে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। রুবিও বলেন, আমরা শেষবারের মতো রুশ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মন্তব্যে আমরা আশাবাদী হতেই পারি।

কিয়েভ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত বলে জানানোর পর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ফের সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় শুরু করেছে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ইউক্রেনে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে কয়েকটি রাশিয়ান সূত্র। 
বুধবার তারা জানায়, যদি কোনো সমঝোতা হয়, তবে সেক্ষেত্রে রাশিয়ার সামরিক অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে এবং মস্কোর উদ্বেগের সমাধান করতে হবে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। 
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণে লাখ লাখ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। কয়েক মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর মস্কো ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগের নীতি পরিবর্তন করেছেন, মস্কোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় 
আলোচনা শুরু করেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় স্থগিত করেছেন এবং বলেছেন ইউক্রেনকে যুদ্ধ বন্ধের শর্ত মেনে নিতে হবে। কিয়েভ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত বলে জানানোর পর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ফের সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় শুরু করতে সম্মত হয়।

রাশিয়ার একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র জানান, রাশিয়া চায় যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে তারা কিছু নিশ্চয়তা পাবে, যাতে ভবিষ্যতে তাদের ক্ষতি না হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বলেন, ‘বর্তমানে যা বলা হচ্ছে সেভাবে পুতিনের পক্ষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়া কঠিন। পুতিনের অবস্থান শক্ত, কারণ রাশিয়া এখন রণাঙ্গনে এগিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ, প্রায় ১১৩,০০০ বর্গকিলোমিটার (৪৩,৬৩০ বর্গমাইল), এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং কয়েক মাস ধরে যুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের ওপেন সোর্স মানচিত্র এবং রাশিয়ার অনুমান অনুসারে, গত আগস্টে ইউক্রেন দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে পশ্চিম রাশিয়ার একটি ছোট অংশ দখল করেছিল, তবে সেখানে তার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়েছে।

রুশ সূত্রটি বলেছে, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে কোনো গ্যারান্টি না থাকলে রাশিয়ার অবস্থান দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং পরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে যুদ্ধ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী করতে পারে। আরেকটি শীর্ষ রাশিয়ান সূত্র জানায়, মস্কোর দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি একটি ফাঁদ মনে হচ্ছে, কারণ পুতিনের জন্য কিছু বাস্তব গ্যারান্টি বা প্রতিশ্রুতি ছাড়া যুদ্ধ থামানো কঠিন হবে।

তৃতীয় একটি রুশ সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে বড় কথা হলো যুক্তরাষ্ট্র ফের সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় শুরু করতে রাজি হয়েছে এবং সেই পদক্ষেপটি একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়ে সাজানো হয়েছে। তবে ক্রেমলিন এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
পুতিন বারবার স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। গত ডিসেম্বরে তিনি বলেছিলেন, আমাদের যুদ্ধবিরতি দরকার নেই, আমাদের দীর্ঘমেয়াদী শান্তির প্রয়োজন যা রাশিয়ান ফেডারেশন এবং তার নাগরিকদের জন্য গ্যারান্টি দ্বারা সুরক্ষিত হবে। এই গ্যারান্টি কীভাবে নিশ্চিত করা যায় তা একটি কঠিন প্রশ্ন।

২০ জানুয়ারি তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ‘সাময়িক যুদ্ধবিরতি উচিত নয়, যুদ্ধ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কোনো ধরনের বিরতির সুযোগে যাতে বাহিনী পুনর্গঠন ও পুনঃসশস্ত্রকরণের সুযোগ না পায়। আমাদের বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রয়োজন।
গত বছরের জুনে পুতিন শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তার পক্ষ থেকে শর্ত ঘোষণা করেছিলেন : ইউক্রেনকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে তার ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে কিয়েভের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭৫ শতাংশ এবং লুহানস্ক অঞ্চলের ৯৯ শতাংশের বেশি এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। রাশিয়া বলেছে, এই চারটি অঞ্চলের পুরোটাই এখন আইনত রাশিয়ার অংশ এবং এগুলো কখনোই ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। তবে ইউক্রেন বলছে এই অঞ্চলগুলো অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে এবং কিয়েভ কখনোই নিজ দেশের অভ্যন্তরে রাশিয়ার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করবে না।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ মঙ্গলবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইউক্রেনের মাটিতে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সেনাবাহিনী মেনে নেবে না রাশিয়া। অন্যদিকে, একজন প্রভাবশালী রাশিয়ান আইনপ্রণেতা বলেছেন যে কোনো শান্তি চুক্তি মস্কোর শর্তে হবে।
রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান কনস্তানতিন কোসাচেভ টেলিগ্রামে এক পোস্টে বলেছেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তাই রাশিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন হবে। তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো চুক্তি- আমাদের শর্তে হবে, আমেরিকার শর্তে নয়। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে মঙ্গলবার জেদ্দায় বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

ওই বৈঠক শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে মস্কোর ওপর সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ চুক্তির ছিল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশা করেন হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক বাগ্বিত-ায় ভেস্তে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে সহায়ক হবে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক।

তিনি প্রাথমিকভাবে আকাশ ও সমুদ্রে রাশিয়ার সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও দিয়েছেন। এই প্রস্তাবের লক্ষ্য হলো, তিনি যুদ্ধ দ্রুত সমাপ্ত করার জন্য ট্রাম্পের লক্ষ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনীয় নেতাকে শান্তির জন্য প্রস্তুত না থাকার অভিযোগ করেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ওপর জোর দেন। জেলেনস্কি ইউরোপীয় মিত্রদের তার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে আনতে চেষ্টা করছেন।

তিনি বলছেন, এটি মস্কোর শান্তিচুক্তির সদিচ্ছা পরীক্ষা করার একটি সুযোগ। অন্যদিকে, কিয়েভ ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাতের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ফলে একটি দ্বিপক্ষীয় খনিজ চুক্তি সই আটকে গেছে এবং ওয়াশিংটনের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়ার চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

মঙ্গলবারের বৈঠকে এই চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়। ট্রাম্প এটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন, কারণ এটি ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে কাজ করবে।

×