
ছবি: সংগৃহীত
ভারতে মুঘল ও মুসলিম ঐতিহ্যের বিভিন্ন স্থাপনা নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। ক্ষমতাসীন বিজেপি ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বারবার মুঘল আমলের নিদর্শন অপসারণের দাবি তোলা হচ্ছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি। মহারাষ্ট্রের সম্ভাজীনগর জেলার খুলদাবাদে অবস্থিত আওরঙ্গজেবের সমাধি সরিয়ে ফেলার দাবি তুলেছেন বিজেপি নেতারা, যার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস সমাধি অপসারণের দাবির প্রতি সমর্থন জানালেও বলেছেন, এটি আইনানুগ উপায়ে করতে হবে। কারণ, পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকার সমাধিটি ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থার (ASI) অধীনে সংরক্ষিত স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
সম্প্রতি বিজেপি সাংসদ ও মারাঠা বংশধর উদয়ন রাজে ভোঁসলে আওরঙ্গজেবের সমাধি ভেঙে ফেলার দাবি করেন। তিনি আওরঙ্গজেবকে 'চোর ও লুটেরা' আখ্যা দিয়ে বলেন, "বুলডোজার পাঠিয়ে তার সমাধি ধ্বংস করা উচিত। যারা এই সমাধিতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায়, তারা চাইলে এটি নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু আওরঙ্গজেবের গৌরব আর সহ্য করা হবে না।"
এর আগে, গত ৪ মার্চ বিজেপি নেতা নবনীত রানাও সমাধি ভেঙে ফেলার দাবি তুলেছিলেন। তিনি মহারাষ্ট্র সরকারকে আহ্বান জানান, আওরঙ্গাবাদ জেলার নাম পরিবর্তনের মতোই আওরঙ্গজেবের সমাধিও নিশ্চিহ্ন করা হোক।
সমাধিটি ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত হয় সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য আবু আজমির এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। তিনি আওরঙ্গজেবের প্রশংসা করে বলেন, "সম্রাট আওরঙ্গজেব বহু হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তিনি মোটেও নিষ্ঠুর শাসক ছিলেন না।" তার এই বক্তব্যের পর মহারাষ্ট্র বিধানসভা থেকে তাকে অধিবেশন চলাকালীন বাকি সময়ের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
প্রসঙ্গত, সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বশেষ শক্তিশালী সম্রাট। তিনি ১৬৫৮ থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছর ভারত শাসন করেন। ধর্মপ্রাণ মুসলিম শাসক হিসেবে পরিচিত আওরঙ্গজেব শরীয়া আইন চালু করেছিলেন এবং তার শাসনামলেই মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিস্তার ঘটে। তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সমাধি ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকলেও, বিজেপি নেতাদের সাম্প্রতিক উসকানিতে এটি নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/R4RV-KE7e9s?si=2ArXxjCkZ_2BPZ0-
এম.কে.