
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর নির্দেশে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের গ্রেপ্তারের ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় তিনি চীনের হংকং সফর শেষে দেশে ফিরছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই আইসিসি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রেখেছিল। অবশেষে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে আইসিসির কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র এক সংবাদ সম্মেলনে দুতার্তের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার শাসনামলে তথাকথিত মাদকবিরোধী যুদ্ধের নামে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেছেন। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তার শাসনামলে দেশব্যাপী চালানো মাদকবিরোধী অভিযানে ১২,০০০ থেকে ৩০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনাগুলো বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার জন্ম দেয় এবং আইসিসি তা তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়।
দুতার্তে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মাদকবিরোধী অভিযানের নামে কঠোর দমননীতির পক্ষে অবস্থান নেন। এমনকি একবার তিনি বলেছিলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের মরদেহ এত বেশি পরিমাণে উপসাগরে ফেলা হবে যে মাছেরা তা খেয়ে মোটা হয়ে যাবে। তবে, গ্রেপ্তারের পর তিনি দাবি করেছেন যে, তিনি কোনো অপরাধ করেননি এবং কেন তাকে আটক করা হয়েছে, তা জানেন না।
এদিকে, দুতার্তের গ্রেপ্তারের পরপরই প্রশ্ন উঠেছে—এরপর কি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পালা? গাজায় সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আইসিসি ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইসিসি এবার তাকে গ্রেপ্তারের জন্য আরও তৎপর হতে পারে।
তবে নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারের বিষয়ে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো, ইসরায়েল আইসিসির সদস্য নয়। তবে আইসিসির সদস্যভুক্ত দেশগুলোর যেকোনো একটিতে সফর করলে তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন। এদিকে, আইসিসির এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতোমধ্যে তিনি আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং ইসরায়েলের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
বিশ্বজুড়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দুতার্তের গ্রেপ্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কার্যকারিতা ও সক্ষমতার প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা আরও বাড়তে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নেতানিয়াহু কি এই আইনের হাত থেকে রক্ষা পাবেন, নাকি তাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে?
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/JYezlD__oHY?si=DG0FCDrSjsCcDA3s
এম.কে.