
ইসরাইলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজার একটি এলাকা
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বুধবার ইসরাইলি হামলায় শিশুসহ আরও ৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও ইসরাইল প্রায় প্রতিদিনই গাজায় হামলা চালাচ্ছে এবং সম্প্রতি এসব হামলা আরও জোরদার হয়েছে। এসব হামলায় ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের দখলকৃত পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বাহিনীর ব্যাপক হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক ৬০ বছর বয়সী নারী। এছাড়া পূর্ববর্তী ঘটনায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে বলে আলাদা বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। খবর আলজাজিরার।
এদিকে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ত্রাণ গোষ্ঠী গাজায় প্রবেশকারী সমস্ত ত্রাণের ওপর ইসরাইলি অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইসরাইলের প্রতিনিধিরা গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে হামাস নতুন দফায় আলোচনা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা আনাদোলু বলছে, মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর নতুন হামলায় কমপক্ষে সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। গাজা শহরের পূর্বে বেসামরিক লোকজনের ভিড়কে লক্ষ্য করে চালানো ইসরাইলি বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা আনাদোলুকে জানিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাজা শহরের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কাছে নেটজারিম এলাকায় একদল ফিলিস্তিনি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির কাছে জড়ো হওয়ার পর একটি ইসরাইলি ড্রোন তাদের ওপর হামলা চালায়। এছাড়া দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরের পূর্বে অবস্থিত শোকা গ্রামে আরেকটি ড্রোন হামলায় একজন ফিলিস্তিনি নারীও নিহত হয়েছেন বলে একটি মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত ইসরাইলি সেনাবাহিনীও ওই এলাকার ফিলিস্তিনি বাড়িগুলোতে গুলিবর্ষণ করেছে। ফিলিস্তিনি মেডিক্যাল সূত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা আনাদোলুকে জানিয়েছে, সীমান্তে অবস্থানরত সেনারা মধ্য গাজার দক্ষিণ-পূর্ব দেইর আল বালাহের একটি অঞ্চলে সরাসরি গুলি চালালে একটি শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। শিশুটি প্রথমে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় এবং পরে শিশুটির মৃত্যু হয়। আহতদের সম্পর্কে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছিল। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে পশ্চিমতীরের উত্তরের শহর ও শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর ব্যাপক অভিযান শুরু হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য হলেও অসংখ্য নিরীহ বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন। গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে পশ্চিমতীরে অভিযান শুরু হলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। ইসরাইলি বাহিনী জেনিন ও এর আশপাশের শহরের শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে ঘরবাড়ি, রাস্তা ও পানির পাইপসহ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। ইসরাইল বলছে, ইরান সমর্থিত হামাস ও ইসলামিক জিহাদসহ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি গড়ে তোলা অঞ্চলগুলোকে লক্ষ্য করে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। ১৯৪৮ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় যেসব ফিলিস্তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন বা তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তাদের বংশধরদের জন্য এসব ঘনবসতিপূর্ণ শহর গড়ে তোলা হয়েছিল। ফ্রান্স ও জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই অভিযানের ব্যাপকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।