
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বরাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে এশিয়ার তিন পরাশক্তি ইরান, চীন ও রাশিয়ার আসন্ন যৌথ সামরিক মহড়ার ঘোষণা। এই তিন দেশের সম্মিলিত নৌ মহড়া ‘সম্মিলিত নৌ নিরাপত্তা মহড়া’ আগামী ১১ মার্চ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে উত্তর ভারত মহাসাগরে ইরানের চাবাহার বন্দরের উপকূলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি শুধুমাত্র আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করার একটি প্রচেষ্টা নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য একটি কঠোর বার্তা।
ইরান, চীন ও রাশিয়ার এই নৌ মহড়া বিশ্ব রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই মহড়ায় ইরানের নৌবাহিনী, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), চীনের নৌবাহিনী ও রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ অংশ নেবে। তিন দেশই জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য আঞ্চলিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। তবে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যৌথ মহড়া শুধু নিরাপত্তার দিকেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি পশ্চিমা বিশ্বকে সতর্ক করার কৌশলও হতে পারে।
এই মহড়ার ঘোষণা এমন এক সময় এসেছে যখন ইরানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। মার্কিন প্রশাসন নিষেধাজ্ঞার বাইরে গিয়ে এখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি সামরিক হামলার কৌশল নিয়ে ভাবছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং বিভিন্ন গোপন সামরিক পরিকল্পনার কথাও প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই ইরান তার শক্তিশালী দুই মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে এই সামরিক মহড়ার ঘোষণা দিল, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে।
রাশিয়া সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি সমঝোতার আহ্বান জানালেও ইরান এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা নরম হয়েছে বলে মনে করা হলেও, ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার মিত্রতার কোনো ঘাটতি নেই। চলতি বছরের শুরুতেই ইরান ও রাশিয়া একটি ২০ বছর মেয়াদী কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে, রাশিয়া প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইরানকে সামরিক ও কৌশলগত সহায়তা দেবে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেসকিয়ান রাশিয়া সফরের সময় আমেরিকার একতরফা ও স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরান, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার হবে এবং এটি মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যৌথ নৌ মহড়া সেই বৃহৎ পরিকল্পনারই একটি অংশ।
বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার প্রভাব কমতে থাকায় এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ইউরোপকে উপেক্ষা করার নীতির কারণে এশিয়ার পরাশক্তিরা আরও শক্তিশালী জোট গঠন করছে। ইরান, চীন ও রাশিয়ার এই ঐক্য ভবিষ্যতে বিশ্ব কৌশলগত ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/np_QY1FNHOQ?si=B8aCgWJjvhmHekV5
এম.কে.