
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে সৌদি আরবের জেদ্দায় বৈঠক শুরু হয়েছে
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে সৌদি আরবের জেদ্দায় বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। আলোচকরা বলছেন, বৈঠকে উভয় পক্ষই ইতিবাচক। ভালো ফল আসতে পারে। মঙ্গলবারের ওই বৈঠক শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে মস্কোর ওপর সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ চুক্তি নিয়ে আলোচনার বিষয়টিও রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশা করছেন, হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক বাকবিত-ায় ভেস্তে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে সহায়ক হবে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক। তিনি প্রাথমিকভাবে আকাশ ও সমুদ্রে রাশিয়ার সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও দিয়েছেন। খবর বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের।
এই প্রস্তাবের লক্ষ্য হলো, তিনি যুদ্ধ দ্রুত সমাপ্ত করার জন্য ট্রাম্পের লক্ষ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনীয় নেতাকে শান্তির জন্য প্রস্তুত না থাকার অভিযোগ করেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ওপর জোর দেন।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকেই কিয়েভের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের বিষয়ে নীতি পরিবর্তন করেছে এবং ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। তারা সামরিক সহায়তা বন্ধ করেছে এবং কিয়েভের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় স্থগিত রেখেছে। তবে সৌদি আরবে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক ‘খুব গঠনমূলকভাবেই’ শুরু হয়েছে বলে টেলিগ্রামে জানান, জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমক। তিনি অলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সোমবার রাতে এক পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, আমরা বাস্তবসম্মত ফলের আশা করছি। ইউক্রেনের অবস্থান পুরোপুরি গঠনমূলক হবে। এই বৈঠকের আগে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোরে চালানো বৃহত্তম ড্রোন হামলায় রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরে যায়। কয়েকটি বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়ে কর্তৃপক্ষ বহু ফ্লাইট অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এ সময় রাশিয়ার আকাশ থেকে মোট ৩৩৭টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করা হয়, এগুলোর মধ্যে ৯১টি মস্কোর এবং ১২৬টি কুর্স্কের ওপর থেকে। এর আগে গত শনিবার এক হামলায় কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়।
জেলেনস্কি ইউরোপীয় মিত্রদের তার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে আনতে চেষ্টা করছেন। তিনি বলছেন, এটি মস্কোর শান্তিচুক্তির সদিচ্ছা পরীক্ষা করার একটি সুযোগ। অন্যদিকে, কিয়েভ ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাতের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ফলে একটি দ্বিপক্ষীয় খনিজ চুক্তি সই আটকে গেছে এবং ওয়াশিংটনের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়ার চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে এই চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়। ট্রাম্প এটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন, কারণ এটি ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে কাজ করবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, এ আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন শান্তির জন্য কতটা ছাড় দিতে প্রস্তুত, তা বোঝা যাবে। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি এবং যুদ্ধের অবসান সম্ভব হবে কেবল তখনই, যখন উভয় পক্ষ কিছু ছাড় দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তবে সৌদি আরবে থাকলেও জেলেনস্কি সরাসরি আলোচনায় অংশ নেননি। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আরবের জেদ্দায় ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আশা প্রকাশ করেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ চুক্তি শিঘ্রই সই হবে। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøালাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মস্কো সফরের পরিকল্পনা করছেন। ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন কিয়েভ শক্তিশালী অবস্থানে থেকে আলোচনা করবে। তারা মনে করে, আক্রমণকারী রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় যেতে ইউক্রেনের তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।