ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ মার্চ ২০২৫, ২৩ ফাল্গুন ১৪৩১

ইফতার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তর প্রদেশের রামপুরে উত্তেজনা, মসজিদের ইমামসহ ৯ জন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০২:৫৩, ৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০২:৫৪, ৭ মার্চ ২০২৫

ইফতার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তর প্রদেশের রামপুরে উত্তেজনা, মসজিদের ইমামসহ ৯ জন গ্রেফতার

ছবি : সংগৃহীত

উত্তর প্রদেশের রামপুরের মানাকপুর বজারিয়া গ্রামে একটি মসজিদে মাইকের মাধ্যমে ইফতার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার পর হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়, যা শেষ পর্যন্ত পুলিশি হস্তক্ষেপ ও ৯ জনের গ্রেফতারের মাধ্যমে গড়ায়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মসজিদের ইমামও রয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে টান্ডা থানার সৈয়দ নগর চৌকি এলাকায়। পুলিশ মসজিদ থেকে মাইকটি সরিয়ে নিয়ে যায় এবং ইফতার ঘোষণার এই প্রথাকে “নতুন রীতি” বলে উল্লেখ করে।

প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে গ্রামের প্রায় ২০টি মুসলিম পরিবারের জন্য মসজিদটি ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু রবিবার মসজিদের ইমাম যখন মাইকে ইফতারের সময় ঘোষণা দেন, তখন কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য এতে আপত্তি তোলেন এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

ঘটনার পরপরই ১১২ জরুরি সেবার পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করে। তবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা মাইকের মাধ্যমে ইফতার ঘোষণার বিরোধিতা করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং মসজিদের ইমামসহ মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে জনশৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাতে মসজিদ থেকে মাইকটি সরিয়ে নেয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) অতুল কুমার শ্রীবাস্তব এ বিষয়ে বলেন, “মসজিদে মাইকের মাধ্যমে ইফতার ঘোষণা করার পর দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

এই ঘটনায় স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা অভিযোগ তুলেছেন যে, ধর্মীয় স্থানে ঘোষণা দেওয়া নতুন কিছু নয়, তবুও বিশেষভাবে ইফতার ঘোষণাকে “নতুন রীতি” বলে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

একজন স্থানীয় ব্যক্তি, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, প্রশ্ন তোলেন, “আজান প্রতিদিন মাইকে দেওয়া হয়, তা হলে ইফতারের ঘোষণা নিয়ে এত আপত্তি কেন?”

স্থানীয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব মাওলানা রশিদ আহমেদ এ ঘটনাকে নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু বানানোর উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “ধর্মীয় স্থান থেকে ঘোষণা দেওয়া চিরাচরিত ধর্মীয় প্রথার অংশ, তা হলে কেন শুধু এটিকেই আলাদা করে দেখা হচ্ছে?”

আইন বিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট শারিক আনোয়ারও পুলিশের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “গ্রেফতার এবং মাইক অপসারণের এই সিদ্ধান্ত একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট পদক্ষেপ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সমানাধিকারের নীতির পরিপন্থী।”

ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং সাধারণ মানুষকে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে, বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন ইতোমধ্যে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি, পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অনেকে।

 

সূত্র: মুসলিম মিরর

 

 

 

মো. মহিউদ্দিন

×