ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

ব্রাসেলসে ইইউর ২৭ দেশের নেতাদের সম্মেলন

ইউক্রেনকে সহায়তার সিদ্ধান্ত ইউরোপের

প্রকাশিত: ২০:২৭, ৬ মার্চ ২০২৫

ইউক্রেনকে সহায়তার সিদ্ধান্ত ইউরোপের

ইউক্রেনের সমর্থনের সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন ইউরোপীয় নেতারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিয়েভের জন্য সামরিক সহায়তা স্থগিতের প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার এক সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত নেন তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের নেতারা ব্রাসেলসে এক সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে অংশগ্রহণ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানানো সম্পর্কিত বিবৃতিতে হাঙ্গেরি সায় না দেওয়ায় ঐক্য প্রদর্শনের প্রচেষ্টা কিছুটা ক্ষুণ্ন হতে পারে। খবর রয়টার্সের।
ইউরোপের প্রতিরক্ষা নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্যেই এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ ইউরোপকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তাদের আশঙ্কা, এই যুদ্ধে রাশিয়া দায়মুক্তি পেলে ভবিষ্যতে ইইউভুক্ত দেশ তাদের হামলার শিকার হতে পারে। পাশাপাশি তারা মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার ওপর আর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারছেন না। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটোর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তিনি ইউরোপকে নিজস্ব নিরাপত্তার দায়িত্ব আরও বেশি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এর আগেও বলেছিলেন, ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলো পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যয় করছে না, তাদের সুরক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার নয়। কিয়েভের দিক থেকে মার্কিন সমর্থন সরে গিয়ে মস্কোর প্রতি আরও নমনীয় অবস্থান দেখা দেওয়ায় গভীর উদ্বেগে পড়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। তাদের দৃষ্টিতে, রাশিয়া ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রেঁাঁ বুধবার জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, আমি বিশ্বাস করতে চাই যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাশে থাকবে। তবে সেটা যদি না হয় তা হলে আমাদের সেভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় অংশীদারদের সুরক্ষার জন্য ফ্রান্স তার পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। এদিকে জার্মানির সম্ভাব্য নতুন সরকার প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির জন্য ঋণ গ্রহণের সীমা শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। ফলে দেশটি সামরিক খাতে অতিরিক্ত কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারবে। এদিকে ইউরোপীয় কমিশন প্রতিরক্ষা খাতে ৮৬২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহের একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ইইউ সরকারগুলোকে ঋণ দেওয়ার জন্য ১৬১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপ এখন ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি ইউক্রেনের জন্য অর্থ সহায়তা স্থগিত রাখবেন। এই বিষয়টি নিয়েও নেতারা আলোচনা করেন যে যুক্তরাষ্ট্র যদি সহায়তা বন্ধ করে দেয় তা হলে আর কীভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা করা যায়। ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্র সরবরাহ করার প্রসঙ্গটিও আলোচনায় ছিল। এদিকে ইউক্রেন প্রতিরোধ বাহিনীতে অংশ নেবে না আয়ারল্যান্ড। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন এই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন প্রতিরোধ বাহিনীতে আইরিশ সৈন্যদের অংশগ্রহণের জন্য পাঠানো হবে না। তবে শান্তিরক্ষা দলে অংশগ্রহণের জন্য তার দেশ উন্মুক্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। লিভারপুলে আইরিশ-ব্রিটিশ শীর্ষ সম্মেলনে মাইকেল মার্টিন সাংবাদিকদের বলেন- যদি যুদ্ধবিরতি হয় বা যদি সংঘাত বন্ধ হয়, আয়ারল্যান্ড সব সময় শান্তিরক্ষার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে, কিন্তু আমরা কোনো প্রতিরোধ বাহিনীর অংশ হব না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই বিষয় দুটি ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র ব্যাপার। ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি রক্ষা নিশ্চিত করতে ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন করতে প্রস্তুত। তবে তেমন পরিস্থিতিতে সৈন্যদের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি দেশ দুটি।

×