
ছবি: সংগৃহীত।
২০১৯ সালে আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরেছিলেন, তখন অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু পাঁচ বছর পর, চিত্রটি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। বন্ধুত্বের পরিবর্তে এসেছে সন্দেহ, অভিযোগ, আর মোদির জন্য এক স্পষ্ট বার্তা—ট্রাম্প কারও প্রকৃত বন্ধু নন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিশ্লেষক রবিশংকর লিখেছেন, ট্রাম্পের কৌশলের মধ্যেই এক প্রকার পাগলামি রয়েছে। তার আচরণ যেন এক অজানা প্রতিশোধের সুগন্ধ ছড়িয়ে দেয়। ভারতকে ২১ মিলিয়ন ডলার অনুদান নেওয়ার অভিযোগ তুলে ট্রাম্প আসলে কী বোঝাতে চাইলেন? চারবার তিনি এই দাবি করেছেন, যা কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু আসল সত্য কী?
রবিশংকর তার নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ডেটা বলছে, ভারতীয় সরকারের জন্য ইউএস এআইডির অর্থায়ন ২০৪ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ১৫ মিলিয়নে নেমে এসেছে। তাহলে ২১ মিলিয়ন ডলার আসলে কোথা থেকে এলো? যদিও এ অভিযোগ এখনও প্রমাণিত হয়নি, তবে মার্কিন রাজনীতিতে এটি যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছে।
ট্রাম্প যখন ভারতীয় নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তখনই আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে। তিনি দাবি করেছেন, ২৯ মিলিয়ন ডলার গোপনভাবে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর যখন আন্তর্জাতিক মহলে সিআইএ-এর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, তখন ট্রাম্পের এই বক্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রবিশংকর এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, অতীতে সিআইএ আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের সহায়তা করেছিল, যার পরিণতিতেই ঘটে ৯/১১ হামলা। তাহলে কি এবারও কোনো ভুল কৌশল নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন?
শুধু ভুল তথ্য ছড়ানোই নয়, ট্রাম্প মাঝে মধ্যেই বিস্ময়কর গাফিলতিও করেন। তিনি একবার মোদিকে বলেছিলেন "ভারত ও চীনের কোনো সীমান্ত নেই", অথচ বাস্তবে ২৫২০ মাইল দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে! তিনি মনে করেন, বেলজিয়াম একটি শহর এবং বলেছেন "ইংল্যান্ড আসলে যুক্তরাজ্যের অংশ নয়"।
এই ভুলভাল ধারণার মধ্যেও ট্রাম্পের ভয়ংকর দিক হলো তার বাণিজ্য নীতি ও অভিবাসন নীতি। রবিশংকর লিখেছেন, ট্রাম্প ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের শেকলে বেঁধে ফেরত পাঠিয়েছেন, আমেরিকান বাজারে ভারতীয় পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক বসিয়েছেন। তাহলে মোদির বন্ধু যদি এমন হয়, তাহলে শত্রু কেমন হবে?
মোদির হয়তো এখনই বুঝে ফেলা উচিত যে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্থায়ী বন্ধু বলে কিছু নেই, আছে কেবল স্বার্থের অস্থায়ী মেলবন্ধন। রবিশংকরের ভাষায়, "যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে নিজ দেশের ভোটের রাজনীতির সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করে, তাহলে বিপদ আসবেই। কারণ, ভোটাররা যত সহজে প্রভাবিত হয়, ততটাই সহজে প্রতারিত হয়।"
নুসরাত