
আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চিত্র। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। তবে রিসার্চের পূর্বাভাস বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারত এই অবস্থান দখল করবে। বর্তমানে ভারতে প্রায় ৪০ কোটি মুসলিম বাস করে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশের কিছু বেশি। ২০৫০ সালের মধ্যে এই জনসংখ্যা আরো বাড়বে এবং ভারতই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি।
পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে বিশ্বে মোট মুসলিম জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৬০ কোটি, যা তখনকার বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় ২৩ শতাংশ। তবে আগামী কয়েক দশকে এই জনসংখ্যা আরো দ্রুতগতিতে বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২৮০ কোটিতে, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছাবে। বিশ্লেষকদের মতে, মুসলিম জনগোষ্ঠীর উচ্চ জন্মহার, তুলনামূলকভাবে তরুণ বয়সী জনসংখ্যা এবং মুসলিম অধ্যূষিত অঞ্চলে গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনসংখ্যার হার বাড়ছে। বিশেষ করে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এই প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি।
ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে কয়েক বছর ধরে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। বিষয়টি কেবল জনসংখ্যা সংক্রান্ত আলোচনায় সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা স্পষ্টভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অন্যতম ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের শেয়ার অফ প্রিলিজিয়াস মাইনরিটিস ক্রস কান্ট্রি এনালাইসিস শীর্ষক এক প্রতিবেদনের পর থেকে এ বিতর্ক নতুন মাত্রা পায়। প্রতিবেদনে উঠে আসে, ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ভারতের মোট জনসংখ্যায় হিন্দুদের অংশীদারিত্ব ৮৪.৬৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮.০৬ শতাংশে। বিপরীতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর অংশীদারিত্ব ৯.৮৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.০৯ শতাংশ।
এই পরিসংখ্যানকে ঘিরে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, একসময় মুসলিমরা সংখ্যায় হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে। এই আশঙ্কা থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিক মঞ্চে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ইস্যু করে নানা বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, যা কখনো কখনো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। তবে জনসংখ্যাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ বলছে, এই আশঙ্কা বাস্তবতার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না।
যদিও মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্মহার হিন্দুদের তুলনায় কিছুটা বেশি, তবে মোট জনসংখ্যার বিচারে হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যার ব্যবধান এতটাই বড় যে, মুসলিমরা সহজে হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে এমনটা আশঙ্কা অনেকটাই ভিত্তিহীন। তবে ভারতের ধর্মীয় পরিচয় বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্টতই বিভক্ত। একদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠবাদী রাজনীতি মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে, অন্যদিকে প্রগতিশীল অংশটি এই বিষয়টিকে সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির আলোকে দেখতে উৎসাহ দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে, ধর্মীয় জনসংখ্যার এই গাণিতিক সমীকরণ সত্য হলেও, শুধু সংখ্যাত্ত্বিক পরিবর্তন নয় বরং তা ভারতের সামাজিক কাঠামো, রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ বা বৈশ্বিক অবস্থানের উপরও সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
আফরোজা