
ছবিঃ সংগৃহীত
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’আর মঙ্গলবার (৪ মার্চ) জানিয়েছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে যেতে ইসরায়েল প্রস্তুত, তবে শর্ত হলো— হামাসকে অবশ্যই আরও ৫৯ জন বন্দির মধ্যে কিছু সংখ্যককে মুক্তি দিতে হবে।
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে। এর আগে, হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি ও ৫ জন থাই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে, যার বিনিময়ে প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ৪২ দিনের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং ইসরায়েল ও হামাস এখনও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একমত হতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধ পরবর্তী গাজার শাসন ব্যবস্থা এবং হামাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সা’আর জেরুজালেমে সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা দ্বিতীয় ধাপে যেতে প্রস্তুত, তবে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বাড়াতে হলে আরও বন্দি মুক্তির ব্যাপারে চুক্তি করতে হবে।"
এদিকে, কায়রোতে আরব নেতারা যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হয়েছেন।
হামাসের দাবি ও ইসরায়েলের অবস্থান
হামাস জানিয়েছে, তারা দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এগিয়ে নিতে চায়, যা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দিতে পারে। তবে তাদের শর্ত হলো— ইসরায়েলকে গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে এবং ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের হামলার সময় আটক ৫৯ জন বন্দিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, আরও বন্দিকে মুক্তি না দিলে যুদ্ধবিরতি বাড়ানো সম্ভব নয়। তারা এমন একটি পরিকল্পনার পক্ষে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ প্রস্তাব করেছেন। এই পরিকল্পনায় মুসলমানদের রমজান মাস থেকে শুরু করে ইহুদিদের পাসওভার (এপ্রিল পর্যন্ত) যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার প্রস্তাব রয়েছে।
ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র ওমর দোস্ত্রি আর্মি রেডিওকে বলেন, "আমরা হামাসকে উইটকফের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্য কয়েক দিন সময় দিচ্ছি। যদি তারা রাজি না হয়, তবে মন্ত্রিসভা বসে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।"
উইটকফ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে সফর করবেন এবং যুদ্ধবিরতি বাড়ানো কিংবা দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।
ইসরায়েল-হামাস চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সা’আর বলেন, ইসরায়েল চুক্তি ভঙ্গ করেনি বরং হামাসই মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। তিনি দাবি করেন, "যুদ্ধবিরতির আওতায় গাজায় যে ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই হামাস নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছে। এটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর জন্য তাদের প্রধান অর্থের উৎস হয়ে উঠেছে।"
তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে লুটপাট ও ভুলভাবে বিতরণ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসনকারী হামাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক প্রস্তুতি
ইসরায়েলের এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তির ব্যাপারে ১০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত না হলে ইসরায়েল আবারও হামলা শুরু করবে। তবে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সা’আর বলেন, "যদি আমরা তা করার সিদ্ধান্ত নেই, তাহলে করব।"
সূত্রঃ রয়টার্স
ইমরান