
ছবি সংগৃহীত
বিশ্বশান্তির আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করেছিল ইউক্রেন। কিন্তু সেই ‘গান্ধীবাদী’ সিদ্ধান্তই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির জন্য। একসময় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ছিল কিভ। অথচ, ১৯৯০-এর দশকে পশ্চিমা শক্তিগুলোর চাপের মুখে নিজস্ব আণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার ধ্বংস করে দেয় ইউক্রেন। প্রায় সাড়ে তিন দশক পর সেই সিদ্ধান্তের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে তাদের।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ইউক্রেন। তখন দেশটির কাছে প্রায় পাঁচ হাজার পরমাণু অস্ত্র মজুত ছিল, যা তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এতে অন্তত ১০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহনের সক্ষমতাও ছিল। ফলে, তৎকালীন সময়ের পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে ছিল কিভ।
কিন্তু বিশ্বনেতাদের চাপ এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর আশ্বাসের ভিত্তিতে ইউক্রেন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পথে হাঁটে। ১৯৯৪ সালে স্বাক্ষরিত বুদাপেস্ট মেমোরান্ডামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিনিময়ে কিভ নিজের সব পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করে দেয় এবং শেষ অস্ত্রটি ১৯৯৬ সালে রাশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়।
কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন আর হয়নি। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করার সময় যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এরপর পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সক্রিয় সমর্থন দিতে শুরু করে মস্কো। ২০২২ সালে রাশিয়া ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর পর পুরো ইউক্রেন সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক সহায়তা সত্ত্বেও ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, পরমাণু অস্ত্র থাকলে ইউক্রেনকে আজ এতটা দুর্বল অবস্থায় পড়তে হতো না।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জন জে মিয়ারশাইমার কয়েক দশক আগেই সতর্ক করেছিলেন, “রাশিয়া একসময় তাদের পুরনো অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে চাইবে, তখন ইউক্রেন পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে।” আজ সেই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে।
আশিক