ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

ওসামা বিন লাদেন কেন আমেরিকার টার্গেট হয়েছিলেন?

প্রকাশিত: ১৬:৫৩, ৪ মার্চ ২০২৫

ওসামা বিন লাদেন কেন আমেরিকার টার্গেট হয়েছিলেন?

ওসামা বিন লাদেন এক সময়কার মুজাহিদিন যোদ্ধা থেকে আমেরিকার চোখে বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত  সন্ত্রাসী বনে যান। ৯/১১ হামলার পর তিনি আমেরিকার এক নম্বর শত্রুতে পরিণত হন। কিন্তু কীভাবে এবং কেন তিনি আমেরিকার টার্গেটে পরিণত হলেন? কী সেই ঘটনা, যা তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী বানাল?

সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ ও লাদেনের উত্থান

১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছিল। আমেরিকা তখন মুজাহিদিনদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছিল, যাতে তারা সোভিয়েত বাহিনীকে পরাস্ত করতে পারে।

ওসামা বিন লাদেন ছিলেন এক ধনী সৌদি পরিবারের সন্তান, যিনি নিজে আফগান যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এবং মুজাহিদিনদের সহায়তা করেছিলেন। তখন তিনি আমেরিকার পরোক্ষ সহযোগিতাও পেয়েছিলেন।

এই সময় আমেরিকা তাকে শত্রু ভাবেনি, বরং একজন মুজাহিদিন নেতা হিসেবে দেখেছিল।

টার্গেটে পরিণত হওয়ার প্রথম ধাপ: গালফ ওয়ার ও লাদেনের ক্ষোভ

১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেনের ইরাক কুয়েত দখল করে, যা গালফ ওয়ারের সূচনা করে।

সৌদি সরকার আমেরিকার সাহায্য চায় এবং মার্কিন সেনারা সৌদি আরবে ঘাঁটি স্থাপন করে।
লাদেন চেয়েছিলেন, তার মুজাহিদিন বাহিনী দিয়ে সৌদি আরবকে রক্ষা করতে, কিন্তু তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।মার্কিন সেনাদের পবিত্র সৌদি ভূমিতে উপস্থিতি লাদেনকে ক্ষুব্ধ করে।এটাই ছিল প্রথম বড় ধাক্কা, যেখানে লাদেন আমেরিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

 আমেরিকার বিরুদ্ধে লাদেনের যুদ্ধ ঘোষণা

  • ১৯৯৬ সালে লাদেন "আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের" ডাক দেন।
  • তিনি ঘোষণা করেন, মুসলিম দেশগুলো থেকে মার্কিন সেনাদের বের করে দিতে হবে।
  • ১৯৯৮ সালে তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে মার্কিন নাগরিকদের হত্যা করা বৈধ।
  • এই ঘোষণার পর থেকেই আমেরিকা তাকে "বৈশ্বিক হুমকি" হিসেবে দেখতে শুরু করে।

একের পর এক হামলা: লাদেন হয়ে ওঠেন আমেরিকার প্রধান শত্রু

১৯৯৮: কেনিয়া ও তানজানিয়ার মার্কিন দূতাবাসে হামলা

  • আল-কায়েদার সদস্যরা আফ্রিকায় কেনিয়া ও তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলা চালায়।
  • এতে ২০০ জনের বেশি নিহত হন, আহত হন হাজারের বেশি মানুষ।
  • এই হামলার পর আমেরিকা লাদেনকে ধরতে অভিযানে নামে।

২০০০: মার্কিন যুদ্ধজাহাজ USS Cole-এ আত্মঘাতী হামলা

  • ইয়েমেনের সমুদ্রে USS Cole নামের একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়।
  • এতে ১৭ মার্কিন নৌসেনা নিহত হন।
  • আমেরিকা এই হামলার জন্য সরাসরি লাদেনকে দায়ী করে।

এই হামলার পর লাদেন আমেরিকার "সন্ত্রাসীদের তালিকায়" সর্বোচ্চ স্থানে চলে আসেন।

চূড়ান্ত ধাক্কা: ৯/১১ হামলা

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, লাদেনের সংগঠন আল-কায়েদা ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালায়।

চারটি বিমান হাইজ্যাক করে আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে হামলা করা হয়।
দুইটি বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত হানে, যা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।

একটি বিমান পেন্টাগনে হামলা চালায়।
চতুর্থ বিমানটি পেনসিলভানিয়ায় বিধ্বস্ত হয়।

এই হামলায় প্রায় ৩,০০০ মানুষ নিহত হন, যা আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা।

৯/১১-এর পর লাদেন আমেরিকার এক নম্বর টার্গেটে পরিণত হন।

প্রতিশোধ অভিযান ও লাদেনের মৃত্যু

  • ৯/১১ হামলার পর আমেরিকা "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" ঘোষণা করে।
  • ২০০১ সালে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়ে তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে, কারণ তারা লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল।
  • এরপর লাদেন আত্মগোপনে চলে যান।
  • ১০ বছর পর, ২০১১ সালের ২ মে, পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন নেভি সিল টিম ৬ অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করে।

এর মাধ্যমে আমেরিকা তাদের এক নম্বর শত্রুকে নির্মূল করে।

কেন আমেরিকা লাদেনকে টার্গেট করেছিল?

আমেরিকাকে মুসলিমদের শত্রু মনে করা এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দেওয়া।
সৌদি আরবে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির বিরোধিতা করা।
৯০-এর দশকে আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো (কেনিয়া, তানজানিয়া, USS Cole)।
সবচেয়ে বড় কারণ: ৯/১১ হামলা, যেখানে প্রায় ৩,০০০ মানুষ নিহত হয়।

এই কারণেই আমেরিকা লাদেনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ২০১১ সালে হত্যা করে।

ফুয়াদ

×