
সময়টা ২০০৫। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে তুরস্কের পূর্ণ সদস্য পদ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অনেকে তখন মনে করেছিলেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তুরস্ক একদিন ইউরোপীয় সভ্যতার অংশ হয়ে উঠবে। কিন্তু ২০১৬ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে সেই আলোচনা আজ প্রায় মৃত।
এমন পরিস্থিতিতেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এবার সরাসরি বলে দিলেন, ইউরোপের সংকট কাটিয়ে ওঠার একমাত্র সমাধান তুরস্ক। অর্থনীতি থেকে প্রতিরক্ষা, রাজনীতি থেকে অভিবাসন সংকট—সবকিছুতে তুরস্কই হতে পারে ইউরোপের বাঁচার শেষ আশ্রয়। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, ইউরোপ কি সত্যিই সংকটে? এরদোয়ানের এই দাবি শুধু কৌশল নাকি বাস্তবতা? সেটি বুঝতে হলে আগে দেখতে হবে ইউরোপের বর্তমান পরিস্থিতি।
প্রথমত, ইউরোপের অর্থনীতি এখন স্থবির। ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ০.৬ শতাংশ, যা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। দ্বিতীয়ত, ইউরোপের জনসংখ্যা দ্রুত কমছে, বিপরীতে তুরস্কের জনসংখ্যা তরুণ ও কর্মক্ষম, যা ইউরোপের শ্রমবাজারের জন্য হতে পারে আশীর্বাদ। তৃতীয়ত, ইউরোপ এখন রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভুগছে। অভিবাসনবিরোধী ও ইসলামবিদ্বেষী ডানপন্থী দলগুলো দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেন, "লিবারেল গণতন্ত্র আজ সংকটে। ইসলামফোবিয়া ও অভিবাসনবিরোধী শক্তিগুলো ইউরোপকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। মুসলিমরা আজ ইউরোপে নিরাপদ নয়।" তুরস্ক বলছে, ইউরোপ যদি সত্যিই বহু-সংস্কৃতি ধারণাকে টিকিয়ে রাখতে চায়, তবে তাদের তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা জরুরি।
এরদোয়ান আরও বলেন, "সিরিয়া থেকে ইউক্রেন—প্রতিটি সংকটে দেখা গেছে, ইউরোপের আত্মনির্ভরশীলতা কমছে। তুরস্কই একমাত্র দেশ, যারা ইউরোপের প্রতিরক্ষাশক্তি বাড়াতে পারে। ন্যাটোর অন্যতম বৃহৎ সেনাবাহিনী রয়েছে তুরস্কের।" এর পাশাপাশি, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে মিত্রতা করার বিরল ক্ষমতা রয়েছে আঙ্কারার।
এছাড়া, সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে অভিবাসন সংকট নিয়ন্ত্রণেও তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ শরণার্থী তুরস্কে রয়েছে। যদি আঙ্কারা ইউরোপের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে, তবে অভিবাসীদের ঢল নামবে ইউরোপে।
তুরস্ক বহু বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে চাইলেও সম্প্রতি তারা নতুন বিকল্পের দিকে নজর দিচ্ছে। এরদোয়ানের ভাষণের দিনই তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "যদি ইউরোপ আমাদের না নেয়, তাহলে আমরা বিকল্প খুঁজবো। ব্রিক্সের সদস্যপদ আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।"
এরদোয়ানের দাবি বাস্তবসম্মত হলেও, ইউরোপে তুরস্কবিরোধী মনোভাব এখনো শক্তিশালী। ফ্রান্স ও জার্মানি প্রকাশ্যে বলেছে, তুরস্কের ইইউ সদস্যপদ নিয়ে তারা আগ্রহী নয়। তবে বাস্তবতা হলো, ইউরোপ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে রয়েছে এবং তুরস্কের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
সূত্র :https://www.youtube.com/watch?v=WmX8OF7kohE
রাজু