
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের জ্বালানি খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। চীন সম্প্রতি এমন এক শক্তির উৎসের সন্ধান পেয়েছে, যা তাদের আগামী ৬০,০০০ বছর পর্যন্ত জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম হতে পারে।
এই শক্তির নাম থরিয়াম—একটি রেডিওঅ্যাক্টিভ ধাতু, যা প্রচলিত ইউরেনিয়ামের তুলনায় ৫০০ গুণ বেশি পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি হতে পারে ভবিষ্যতের শক্তির গেম চেঞ্জার। চীনের বায়ান ওখনি অঞ্চলে থরিয়ামের বিশাল ভাণ্ডার পাওয়া গেছে, যেখানে অন্তত ১০ লক্ষ টন থরিয়াম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
চীন ইতোমধ্যে থরিয়াম মল্টেন সল্ট রিয়াক্টর (TMSR) নামে একটি পারমাণবিক প্ল্যান্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে। এই রিয়াক্টরে থরিয়ামকে লবণের সঙ্গে মিশিয়ে ১,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হবে, যা নিউট্রন শোষণ করে শক্তি উৎপন্ন করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি অত্যন্ত নিরাপদ, কারণ নিউক্লিয়ার মেল্টডাউনের ঝুঁকি নেই, কম রেডিওঅ্যাক্টিভ বর্জ্য তৈরি হয় এবং এটি প্রচলিত পারমাণবিক শক্তির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। শুধু চীনই নয়, গোটা বিশ্বকে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা থেকে মুক্ত করতেও এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এতদিন থরিয়ামের প্রতি তেমন মনোযোগ দেওয়া হয়নি, কারণ ইউরেনিয়ামকে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের জন্য বেশি উপযোগী মনে করা হতো। তবে বর্তমানে যখন পরিবেশ দূষণ, জ্বালানি সংকট ও শক্তির নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে, তখন থরিয়ামকে সুপার ফুয়েল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই আবিষ্কার শুধু জ্বালানি খাতেই নয়, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বিশ্বশক্তিগুলো এখন এক নতুন পারমাণবিক প্রতিযোগিতায় নেমেছে। চীন যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে ২৪টি নতুন পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার দিকে ঝুঁকছে। শক্তির এই নতুন দৌড়ে থরিয়াম কোন দেশকে এগিয়ে দেবে, তা সময়ই বলে দেবে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/mvwKN99ElxQ?si=Tae3o3SsiCs2D4Uc
এম.কে.